Bondini - Session 1 । Episode - 10 । New Bengali Story 2024
মায়ের চিকিৎসার ঝড়ো পরিস্থিতিতে রাজবীরের ভালবাসা মীরার জীবনে আশার আলো নিয়ে আসছে। এই মুহূর্তে মীরাকে জীবনের নতুন অর্থ বুঝতে সাহায্য করছে রাজবীর
বন্দিনী :- পর্ব -- ১০ Bangla Romantic Golpo
ফোন রাখার পরই মীরার প্রথম প্রশ্ন হলো,,,,,,, আমার মায়ের অপারেশন কবে ঠিক হলো । কই ডক্টর আকাশ তো আমাকে কিছু জানালেন না।উনি তো আমাকে একমাসের মতো সময় দিয়েছিলেন। আমি এখন কি করবো,,এতগুলো টাকা আমি কি করে জোগাড় করবো।
,
মীরার কাঁধে হাত রেখে রাজবীর বললো,,,,,,, এরপর থেকে আন্টির সব কিছুই দেখবে ডক্টর রামানুজ।আর উনি চেকাপ করার পরেই আগামী তিনদিন পরেই অপারেশনের ডেট দিয়েছেন। আর হ্যাঁ এরপর থেকে ওই ডক্টর আকাশের সাথে কোনোরকম যোগাযোগ করার দরকার নেই।
,
মানে,,,,,, এতদিন তো ডক্টর আকাশই মায়ের ট্রিটমেন্ট করছিলেন তাহলে আজকে কি হলো।
,
হম্ম এতদিন ট্রিটমেন্ট করছিলেন ঠিকই তবে কাজের কাজ কিচ্ছু হয়নি।তাই আমি ডক্টর আংকেলকে আন্টির কথা ও রিপোর্ট আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।আর উনিও সাথে সাথে সব কিছু বুঝে আন্টির ট্রিটমেন্ট শুরু করে দেয়।
,
কৃতজ্ঞতা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে মীরা রাজবীরকে বললো,,,,,,, আমি জানিনা আপনার এই ঋণ আমি কি ভাবে শোধ করবো।ডক্টর রামানুজের দেখা পাওয়াটা যে কতটা অসাধ্যের সেটা আমি খুব ভালো মতোই জানি।আমার দাদাভাই ছাড়া যেখানে আমার নিজের আপনজনেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেখানে আপনি আমার মায়ের জন্য যে এতো কিছু করবেন সেটা আমি ভাবতেও পারিনি।
,
রাজবীর মীরার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে ওর কোলে মাথা রেখে বললো,,,,,, রু,,,, এখনো আমাকে আপনি বলে ডাকবে,,, আমি যে তোমাকে ভালোবাসি রু।আর তোমার মা মানে তিনি আমারও মা।অনেক ছোটবেলায় বাবা মা দুজনকেই একসাথে হারিয়েছি । আর তাইতো বুঝতে পারি মায়ের ঠিক কতটা মূল্য থাকে একজন সন্তানের জীবনে। আমিও যে সেই ভালোবাসাটা পেতে চাই আন্টির থেকে। প্লিজ আমাকে এই টুকু করতে দাও আন্টির জন্য।তুমি তো আমারই আর তোমার জা কিছু সবই আমার।সেটা তোমার কষ্ট হোক বা তোমার স্বপ্ন, তোমার অভিমান হোক বা আনন্দ , এমনকি তোমার মাও আজকের পর থেকে আমারই।তাই আমার মায়ের বিষয়ে যেটা বেস্ট হবে আমি সেটাই করবো।
,
রাজবীরের কথা শুনে মীরার মন ভরে উঠলো এক অনাবিল আনন্দে। একটা মানুষ আর একটা মানুষকে ঠিক কতটা পরিমানে ভালোবাসলে তার ভালো মন্দ সবকিছুই আপন করে নিতে পারে। মীরা আস্তে আস্তে রাজবীরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই ভাবছিলো কথাগুলো।
,
রু,,,,,, ওয়েট এক মিনিট।তারপর ট্যাব থেকে একটা ডকুমেন্ট বের করে মীরার সামনে তুলে ধরে বললো,,,,,,দিস ইস ফর ইউ। তুমি ভালো করে পরে তারপর বল কি কি চেঞ্জ করতে হবে।
,
মীরা ট্যাব হাতে নিয়ে কিছুক্ষন পড়ার পরই লাফিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
,
এগুলোর মানে কি রাজবীর,,,,আমি কি ভাবে এই হসপিটালের ওনার হলাম।
,
রিলাক্স,,,,,,,,,,, রাজবীর ওর কাঁধে হাত রেখে ওকে নিজের পাশে বসায়।তারপর বলে,,,,,,,,, কিছু সময় আগে তুমি আর তোমার দাদাভাই যখন কথা বলছিলে আমি তোমার কিছু আগেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।যদিও তোমাদের সব কথা আমার কানে আসেনি।তবুও যখন ওই ডক্টর আকাশ তোমার হাত ধরে ছিলো বিলিভ মি খুব রাগ উঠেছিল।মনে হয়েছিল ওর হাতটা ওর শরীর থেকে আলাদা করে নিই।কিন্তু সেটা অনুচিত হবে।তাই সুপারের রুমে গিয়ে ওনার সেক্রেটারীকে এই হসপিটালের সুপার করে দিই ,,আর তোমাকে এই হসপিটালের ওনার।
,
কথাগুলো সব মীরার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।ও অবাক হয়ে বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছে ।
,
আসলে এই হসপিটালের আগের সুপারের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।তাইতো ওই ক্যারেক্টারলেস ডক্টর আকাশকে নাহলে জব দেয়। ওই ডক্টর রোগীর অসহতার সুযোগ নিয়ে বাড়ির মেয়েদের ওপর নিজের ভালোবাসা জারি করছে ডাক্তারি ছেড়ে আর ওই সুপার সেইসব খোঁজই রাখেনা।তাইতো আমি সব কিছু চেঞ্জ করে দিলাম। না থাকবে ওই সুপার আর না সুপারের প্রিয় ডক্টর।
,
রাজবীরের কথা শুনে মীরা হাসবে না কাঁদবে ঠিক বুঝতে পারলোনা।
এইসব কি রাজবীর,,,,এমন ছেলে মানুষি কেউ করে।আরে ডক্টর আকাশ তো দাদাভাইয়ের বন্ধু হন।তাই তিনি তখন আমাকে ওনার সাথে বন্ধুত্ব করার জন্যই বলেছিলেন।এতে দোষের কি আছে।
,
মীরার কথা শুনে রাজবীরের মুখের কোমলতা কমে গিয়ে কঠিনতা ফুটে ওঠে।ও বলে,,,,,,,, এটা হসপিটাল মীরা,, পার্ক নয় যে এখানে বন্ধুত্ব করে গল্প করতে হবে।আর উনি একজন ডক্টর নিজের ডিউটিতে মন না দিয়ে বন্ধুর বোনের সাথে বন্ধুত্ব করতে কেনো চাইছেন। তুমি কি এতটাই বোকা যে ওই ডক্টরের উদ্দেশ্য বুঝতে পারোনি।
,
রাজবীরের কথাগুলো যে মিথ্যে নয় সেটা মীরাও খুব ভালো মতো জানে।আর তাই ও চুপচাপ নিজের মাথা নামিয়ে নেয়।
,
রাজবীর নিজের রাগকে শান্ত করে মীরার সামনে গিয়ে দুই হাতে অঞ্জলিতে ওর মুখটা তুলে ধরে বলে,,,,,,,, ইউ নো হোয়াট তুমি আমার কাছে খুব প্রিসিয়াস।আমি কোনো মতেই তোমাকে কারোর সাথেই শেয়ার করতে পারবোনা।সেটা তোমার দাদাভাই হোক বা আমাদের সন্তান।
রু ,,,,, আমার কাছে সব আছে শুধু আমার ভালোবাসার মানুষটা এতদিন ছিলোনা।আর আজকে এতো বছর পর যখন আমি তাকে খুঁজে পেয়েছি আমি তাকে কখনোই নিজের থেকে আলাদা রাখতে পারবোনা।আমার তোমার কাছে একটাই চাওয়ার আছে সেটা হলো ,,,,শুধু তুমি আর তোমার ভালোবাসা।আর কিচ্ছু চাইনা আমি।
আমি জানি আমার কথাগুলো খুব বোকা বোকা লাগছে,ইভেন আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা আমি রাজবীর সিংঘানিয়া এমন কথা বলছে।কিন্তু হ্যাঁ আমি স্বীকার করছি দ্যাট আই এম ইন লাভ,,,,, আই লাভ ইউ রু ম্যাডলি। তাই আমার এই লাভ টর্চারটা তোমাকেই সহ্য করতে হবে সারাজীবনের মতো।এছাড়া কোনো উপায় নেই তোমার।
,
মীরা অপলক দৃষ্টিতে রাজবীরকে দেখে যাচ্ছে,,ও দেখে যাচ্ছে ওর পাগলাপোনা গুলো।এতো বছরের জীবনে ওর মা ছাড়া ওকে কেউ এতটা ভালোবাসেনি তাও নিঃস্বার্থ ভাবে।তাই ওর ক্ষমতাই নেই রাজবীরের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে যাওয়ার।আর তাছাড়া এখন এমনিতেই সাহিলের সাথে ওর আর কোনো রকমের কোনো সম্পর্কই নেই।যেটা ছিলো সেটা শুধুমাত্র ওর মা আর অনিতা আন্টির কথা রাখতে।কিন্তু কালকে সেটাও সাহিলের জন্য শেষ হয়ে গেছে।তাই ওর আর কোনো দায় নেই এই সম্পর্কে। মীরা নিশ্চিন্ত মনে রাজবীরের দিকে এগিয়ে আসে,,তারপর ওর বুকে মাথা রেখে বলে,,,,,,,, আমি জানিনা আমি তোমাকে ঠিক তোমার মতোই ভালোবাসতে পারবো কিনা,,তবে কথা দিচ্ছি এই শরীরে যতদিন প্রাণ আছে ,আমার প্রত্যেকটা নিঃস্বাসে তোমার নাম লেখা থাকবে।আমিও ছোট থেকে অনেক অবহেলা পেয়েছি সকলের থেকে। নিজের অবৈধ জন্মের জন্য সবাই আমাকে ঘৃণার চোখেই দেখতো।অথচ এখানে আমার কোনো দোষ ছিলোনা না ছিলো আমার মায়ের দোষ।তবুও সকলে শুধু আমাদেরই দোষ দিয়ে গেছে।আমিও স্বপ্ন দেখতাম আমার মনের মানুষ আমার মুখের কথা বলার আগেই সব বুঝে যাবে।আমি যেমন তাকে সম্মান দেব সেও যেন আমাকে সেই সম্মানটাই দেয়।সত্যি বলছি আজকে সকাল অব্দি আমি ভগবানের কাছে নালিশ করছিলাম আমার ভাগ্য এমন কেন।কেন আমাকে কেউ একটু ভালোবাসেনা ,,কেউ একটু বোঝেনা।কিন্তু এখন আর আমার কোনো নালিশ নেই তার কাছে।উনি আমায় না চাইতেই অনেক অনেক কিছু দিয়ে দিয়েছেন।উনি তোমাকে দিয়েছেন।থ্যাংক ইউ আমাকে ভালোবাসার জন্য, আমার মাকে সম্মান দেওয়ার জন্য, আমাকে নিজের পরিবারের একজন মনে করার জন্য। আবেগে মীরা রাজবীরকে জড়িয়ে ধরে।
,
ইউ ডিজার্ভ মোর রু। শুধু আমার পাশে থেকো এইভাবেই।
FAQ
- মায়ের চিকিৎসার দায়িত্বের জন্য মীরা ও রাজবীরের মধ্যে কেমন পরিবর্তন আসছে?
- রাজবীরের আন্তরিক সমর্থন মীরার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলছে?
- মীরার জীবন কীভাবে পাল্টে যাচ্ছে রাজবীরের নির্ভেজাল ভালোবাসায়?
পরবর্তী পর্বের জন্য প্রস্তুত থাকুন মীরার নতুন যাত্রা এবং আবেগের সাথে রাজবীরের দৃঢ় অঙ্গীকারের গল্প জানতে, যা আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে।
বন্দিনীর সকল পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন - বন্দিনী ভালোবাসার বাংলা গল্প
Thanks for your feedback