Bondini - Session 1 । Episode - 9 । New Bengali Story 2024
প্রিয় মানুষদের বিশ্বাসঘাতকতার মুখোমুখি হয়ে, মীরা কি পারবে নিজেকে সামলাতে? রাজবীরের সান্ত্বনায় খুঁজে পাবে কি নতুন আশ্রয়, নাকি পুরনো ক্ষত তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে আরও গভীর অন্ধকারে? কি হবে এই গল্পে ?
বন্দিনী :- পর্ব -- ৯
আরে ওনারই তো বড়ো লাভ এতে। কারণ তখন তুমি সদ্য ডিভোর্স দিয়ে মন ভেঙে সংসার ভেঙে বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে , নিজের মাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়তে আর এই সুযোগেই উনি তোমাকে নিজের কাছে রাখার ও তোমার মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবার আশ্বাস দিত সিম্পল।
,
হতাশ হয়ে নিজের শুন্য দৃষ্টি ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখলো মীরা।মানুষ ঠিক কতটা নিচে নামতে পারে নিজের স্বার্থের জন্য সেটা আজকে ওই মৈনাক রাজপূতের কথা না শুনলে জানতেই পারতোনা মীরা।
,
শান্ত ভাবেই মীরা রাজবীরকে বললো,,,,,,,,আপনি যে এতো কিছু বলছেন আপনি কিভাবে এইসব কিছু জানতে পারলেন।
,
এক মিনিট বলেই ও দরজার বাইরে ডেভিড কে ডাকলো।
তারপর ডেভিড এর থেকে একটা ট্যাব নিয়ে ওখানে কিছু টাইপ করে মীরার সামনে রাখলো।
,
মীরা দেখছে একটা হোটেলের প্রাইভেট রুমেতে সাহিল ও তৃণার সাথে মিস্টার মৈনাক ও তার সেক্রেটারি বসে আছে । তারপর মীরার বিয়ে নিয়ে যাবতীয় আলোচনা ওরা করছে আর রাজবীরের বলা প্রত্যেকটা কথাই মিলে যাচ্ছে।আর সহ্য করতে পারলোনা মীরা শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
,
রাজবীর তাড়াতাড়ি ওর হাত থেকে ট্যাব টা সরিয়ে দিয়ে মীরাকে জড়িয়ে নিলো নিজের বুকের মধ্যে।
,
কেন কেন রাজবীর সবাই আমার সাথে শুধু ধোকাই দেয় কেনো। কি দোষ করেছিলো আমার মা যার জন্য আজ অব্দি নিজের বিবাহিত স্বামী কোনোদিনও স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করলোনা। আমি কি দোষ করেছিলাম যার জন্য জন্মের আগেই আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আর সাহিল,,,,, আমিতো একবারও বলিনি ওকে বিয়ে করবো। মা আর অনিতা আন্টিই সেই ছোট থেকে আমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো। ওর আমাকে পছন্দ না হলে বলে দিতে পারতো,কিন্তু শুধু মাত্র সম্পত্তির জন্য আমার ইমোশনের সাথে এইভাবে খেললো। আর তৃণা,,,,ওর কথাই বা বাদ ডি কেনো। কলেজে ওকে প্রত্যেকটা সাবজেক্টে আমি হেল্প করেছি।আমার হেল্প ছাড়া তো ও ফেলই করে যেতো আগের বছর। কি করে দিতামনা আমি ওর জন্য। হাত পুড়িয়ে রান্না করবে তাই নিজের রান্নার সাথে ওর রান্নটাও আমিই করে দিতাম।এরজন্য জীবনেও কখনো কোনোরকমের টাকা আমি চাইনি।কারণ ওকে বেস্টফ্রেন্ডের চেয়ে বোন ভেবেছিলাম আমি। কিন্তু শেষ অব্দি ওও আমাকে সেই ধোকাই দিলো। আমারই পিঠ পিছে আমার ফিয়ন্সের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। আর আগামীকাল সেটাই আমার সামনে ধরা পরে। কেন রাজবীর কেন আমিই কেন। প্রচন্ড কাঁদতে থাকে মীরা।
,
রাজবীর অনেক বোঝালেও ওর কান্না থামার নাম নেই যখন তখন ও মীরার দুই গাল হাতে নিয়ে মীরাকে বলে ,,,,সরি রু বাট এটা ছাড়া তোমার কান্না থামানোর কোনো উপায় নেই আমার কাছে। কথাটা বলেই রাজবীর ডুব দেয় মীরার ঠোঁটে। খুব প্যাশনেটলি ভাবে মীরার যত কষ্ট, যত অভিমান যত রাগ সব,,সব কিছুই আস্তে আস্তে শুষে নিতে থাকে রাজবীর ঠোঁটের দ্বারা।
,
মীরাও রাজবীরের স্পর্শে নিজেকে সপে দিয়ে ওর বুকের কাছের শার্টটা আঁকড়ে ধরে।
মীরার যখন নিঃশ্বাস প্রায় ফুলে উঠেছে তখনই রাজবীর ওর ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে আনে।এবং মীরাকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,,,, আজকে আমি রাজবীর সিংঘানিয়া তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমাকে যারা যারা কষ্ট দিয়েছে আঘাত দিয়েছে তাদেরকে আমি হাজারগুন কষ্ট ও আঘাত ফিরিয়ে দেব তাও এক্সট্রা সুদ সমেত।
,
মীরা রাজবীরের বুক থেকে মাথা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,, ঠাম্মি কি আমাকে মানতে রাজি হবে?
,
মীরার কথাটা প্রথমে রাজবীর ধরতে পারেনা । কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মাথায় মীরাকে কোলে তুলে নিয়ে পাগলের মতো গোল গোল ঘুরতে থাকে আর বলে,,,,,, আই লাভ ইউ রু,,,,আই লাভ ইউ।
,
আরে আরে কি করছেন নামান আমাকে আমার মাথা ঘুরছে।
,
ঘোরানো থামিয়ে মীরাকে নিজের কোলের মধ্যে বসিয়েই রাজবীর বলে,,,,,,,,, আমি খুব খুব খুশি হয়েছি তুমি আমাকে বিয়ে করবে বলে।তুমি ভাবতে পারছোনা তুমি আমার লাইফে ঠিক কি।
,
হম্ম সবই তো ঠিক হলো কিন্তু আপনার ঠাম্মি কি জানে আমার বিষয়ে। দেখুন উনি যদি রাজি না হয় তবে কিন্তু এই ব্যাপারে আমি নেই। বড়োদের মত ছাড়া বিয়ে করলে আমরা কখনোই সুখে থাকতে পারবোনা। আর সে ক্ষেত্রে ঠাম্মি আপনাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন।ওনার মতামতটা আমার কাছে কিন্তু সবার আগে।
,
এক মিনিট,,,,,,,,, বলেই রাজবীর নিজের ফোন থেকে কাকে একটা ফোন করলো। আর তারপরেই মীরার কানে গেলো একটা মিষ্টি অথচ ম্যাচুওর একজনের গলার আওয়াজ।
,
রাজ ,,,,, কি ব্যাপার এখন নিজের রু কে ছেড়ে এই বুড়িটার কথা কি করে মনে পরলো।
,
ঠাম্মি তোমার হবু নাতবৌ পণ করেছে তুমি যদি এই বিয়েতে মত না দাও তবে ও আমাকে বিয়ে করবেনা।
,
আচ্ছা দাদুভাই মীরা কি তোমার সামনেই আছে তাহলে ফোনটা ওকে দাও।
,
হ্যাঁ ঠাম্মি ফোনটা স্পিকারে আছে তুমি বল ও শুনতে পাচ্ছে।
,
আমি ভিডিও কল করছি তুই একসেপ্ট কর।
হ্যালো মীরা,,,,,,, আমার নাম গায়েত্রী সিংঘানিয়া,,রাজবীরের ঠাম্মি আর এখন থেকে তোমারও ঠাম্মি হলাম।
মানতেই হবে দাদুভাই তোমার পছন্দ খুব খুব মিষ্টি।
,
মীরা লজ্জা পেয়ে হাত জোর করে নমস্কার জানালো গায়েত্রী দেবীকে।
আমার প্রণাম নেবেন ঠাম্মি।আপনার শরীর ভালো আছে তো।
মীরা দেখলো ফোনের ওপারে যিনি বসে আছেন তিনি এককালে ডাকসাইটের সুন্দরী ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহই নেই,যেমন ব্যক্তিত্বময়ী তেমনি মাতৃরূপিনি। ঠাম্মির মতোই রাজবীরের নীল চোখ।এটা যে উত্তরাধিকার হিসেবেই পেয়েছে সেটা ঠাম্মির পিছনে দুজন মানুষের ছবির সাথে একজনকে পুরোপুরিই রাজবীরের মতন দেখতে।
ইনি মনে হয় রাজবীরের বাবা।কারণ রাজবীরের মুখের আদল ও চোখ পুরো ওনারই মতো।
,
মীরা দিদিভাই আমি কিন্তু তোমার মায়ের সাথে কথা বলে নিয়েছি।আমি জানি সামনেই ওনার অপারেশন , তাই তো শুভ কাজ সব কিছু হবে অপারেশনের পরে।আর এই যে বাঁদর নিজে সেই যে একমাস আগে বাড়ির বাইরে গেছিস বাড়িতে যে একটা বুড়ি থাকে সেটার খেয়াল নেই তোর।শুধু নাতবৌ পছন্দ হতেই এই বুড়ি ঠাম্মির কথা মনে পড়েছে ছেলের।
,
আরে ডার্লিং তুমি তো জানো পর পর সব মিটিং ছিলো তাইতো বাড়ি আসার টাইম পাইনি।আমি কালকেই বাড়ি ফিরছি আজকে কিছু কাজ আছে তাই প্লিজ আজকের দিনটা আমাকে ছেড়ে দাও।
,
দাদুভাই কালকে বাড়ি আসার সময় মীরা দিদিভাইকেও সঙ্গে নিয়ে এসো ,,,, মেয়েটাকে আমি সামনে থেকে দেখতে চাই।কি গো মীরা দিদিভাই আসবে তো এই বুড়ি ঠাম্মিটার সাথে দেখা করতে।
,
মীরা হাল্কা হেসে ঘাড় নেড়ে বললো,,,,আসবো ঠাম্মি ।
আর তুমি মোটেই বুড়ি নও।এখনো তোমাকে কি সুন্দর দেখতে আছে।
,
হম্ম ঐ জন্যই তো আমার দাদু প্রথম দেখাতেই বিয়ে করে নিয়েছিল,আর বিয়ের পর প্রেম।
,
হম্ম ঠিক যেমন তুমি করেছো দাদুভাই,,,সব খবরই আমার কানে আসে সেটা কিন্তু তুমি ভুলোনা।
,
রাজবীর মাথা চুলকে হালকা লজ্জা পেলো,,,কারণ ঠাম্মি যে কথাটা বলেছে সেটা একদম সত্যি।
,
থাক আর লজ্জা পেয়ে লাভ নেই এখন তোমরা কথা বল দুজনে আমার কিছু কাজ আছে।মীরা দিদিভাই আমি কিন্তু কালকে অপেক্ষা করবো তোমার জন্য, রাখছি এখন।
,
হম্ম ঠাম্মি ।।
Thanks for your feedback