Bondini - Session 1 । Episode - 8 । New Bengali Story 2024
রাজবীরের সহানুভূতিতে সে জীবনে নতুন আশার আলো খুঁজে পায় এবং সাহসের সাথে সত্যের মুখোমুখি হয়, তার আত্মসম্মান বজায় রেখে প্রতিটি বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলে
বন্দিনী পর্ব -৮
গর্ভের ভ্রূণটিকে এই পৃথিবীর আলো দেখার আগেই তাকে নষ্ট করে দিতে বলা হয়। কিন্তু মিনাল আন্টির যেহেতু অলরেডি পাঁচমাস পেরিয়ে গেছে আর ওনার শরীরেও কিছু কমপ্লিকেশন আছে তাই ডাক্তারেরা নষ্ট করার রিস্ক নেয়নি।
আর তাতেই বেদম চোটে যান মৈনাক রাজপূত। এরপর থেকেই শুরু হয় আন্টির অপর মানসিক টর্চার। তাতেও আন্টি ভেঙে পড়েনি কিন্তু যখন ওই রাঘব সিনহাকে দিয়ে নোংরা প্রস্তাব পাঠায় তখন আন্টি আর সহ্য করতে পারেনি। সব ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলো উনি।
এতেও ওই মৈনাক রাজপূতের শান্তি হয়নি।উনি লিগ্যাল পেপারে সই করিয়ে নিয়েছিলেন যে এই সন্তানের কোনো দায় উনি কখনোই নেবেননা। আন্টি নিজের আত্ম মর্যাদার জন্য বিনা সংকোচে ওই পেপারে সই করে দেন।
কিন্তু কথায় আছে কার্মা ইস বিচ। যে সন্তানকে একসময় হত্যা করতে চেয়েছিলেন এবং যাকে লিগ্যালি অস্বীকার অব্দি করেছেন আজকে সেই সন্তানের জন্যই বার বার ওনাকে ছুটে আসতে হচ্ছে আন্টির কাছে।কারণ ওই সন্তানের টিস্যু ছাড়া ওনার শরীরে যে মরণ রোগ বাসা বেঁধেছে সেটা সারবেনা। এরপরেও বলবে আমি কিছু জানিনা।
,
রাজবীরের কথা শেষ হলে মীরা ডুকরে কেঁদে ওঠে।রাজবীর মীরাকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। কাঁদুক মেয়েটা অনেক কিছু সহ্য করেছে ছোট থেকে। কোনো মেয়ে কি করে সহ্য করবে যার পিতা জন্মের আগেই তাকে হত্যা করতে চেয়েছে কারণ সে মেয়ে হয়েছে বলে।তারপর বড়ো হওয়ার পর যে মানুষটার সাথে সাতপাকে বাঁধার কথা ছিলো সেও ওকে ধোকা দেয় তাও মেয়েটার বেস্টফ্রেন্ডকে নিয়ে। তারপরেও মেয়েটা ভাঙ্গেনা।কিন্তু কালকে মেয়েটার শেষ সম্বল নিজের লজ্জা টুকুও ও বাঁচাতে পারেনি।এইটুকু মেয়ে তার জীবনে এতটা ঝড় বয়ে গেছে,সেতো একটু কাঁদবেই।
কিছু সময় ওই ভাবেই রাজবীরের বুকের মাঝে কাঁদতে থাকে মীরা।আর রাজবীর যত্ন করে আস্তে আস্তে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
,
রু,,,শশশশ প্লিজ আর কাঁদেনা।আর দেখো তুমি কাদের জন্য নিজের চোখের জল নষ্ট করছো।এইসব বেইমান মানুষগুলো না তোমাকে কোনোদিনও ভালোবেসেছে আর না আন্টিকে সম্মান দিয়েছে। তাহলে কি জন্য তোমার আফসোস বলতে পারো আমাকে।
,
কান্নার ফলে মীরার চোখ ,নাক ঠোঁট লাল হয়ে গেছে। রাজবীর যত্ন করে ওর চোখের জল মুছিয়ে ওকে একটু জল খাওয়ায়।
,
মীরার হুস আসতে ও দ্যাখে ও রাজবীরের বুকের মাঝে বসে আছে।অপ্রস্তুত হয়ে সরে যেতে গেলে রাজবীর ওকে আরও শক্ত ভাবে নিজের কাছে ধরে রাখে।
,
এবার বল তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে চাওনা।আমি কিন্রু তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আগেই দিয়ে দিয়েছি।
,
পিটপিট করে রাজবীরের দিকে তাকিয়ে মীরা বলে,,,,,, দেখুন একটা বিয়ের জন্য পাত্র ও পাত্রীর মধ্যে মিনিমাম কিছু চেনা জানাটা দরকার আমি তো আপনার বিষয় কিছুই জানি না। আপনি যদিও বা আমার বিষয়ে জানেন তবে সবটা নয়।
,
ওহ এই ব্যাপার তাহলে শোনো,,,,আমার নাম রাজবীর সিংঘানিয়া।সিংঘানিয়া কর্পোরেশনের সিইও। অনেক ছোটবেলায় আমার বাবা ও মা মারা যায়।আমি আমার ঠাম্মি গায়েত্রী সিংঘানিয়ার কাছেই মানুষ। উনি এখনো অব্দি সিংঘানিয়া কর্পোরেশনের চেয়ায় ম্যান।ওনার কথাই শেষ কথা অফিসে এমনকি বাড়িতেও।তবে সেটা আমার ক্ষেত্রে নয়।
রুহানিকা সিংঘানিয়া আমার বোন,,, ওর এজ তোমার মতোই ওর এবার থার্ড ইয়ার ফাইনাল। ফিজিক্স নিয়ে পিএইচডি করার ইচ্ছে আছে। আমার এজ 28 ইয়ার্স। আমার স্কিন প্রব্লেমের জন্য আজ অব্দি আমি স্টিল সিঙ্গেল ছিলাম সাথে স্টিল ভার্জিন।কিন্তু গতকাল রাত্রে সেই দুটোই আমি হারিয়েছি একটা পুচকি মেয়ের কাছে। এবার বল আর কি জানতে চাও। নিজের বোন,ঠাম্মি আর একমাত্র তুমি ছাড়া অন্য যেকোনো নারীতেই আমার এল্যার্জি আছে।তাই নিশ্চিন্তে থাকতে পারো আমি কখনোই তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারবোনা।
,
বড়ো বড়ো চোখ করে রাজবীরের সব কথা গুলো শুনছিলো মীরা ।কিন্তু শেষের ওই দুটো শুনেই ওর কান ও গাল আরক্ত হয়ে ওঠে। চোখের সামনে আজকে সকালের রাজবীরের অমন বডি দেখে ওর মনে শিরশিরানি অনুভূত হয়।লজ্জায় নিজের ঠোঁট চেপে ধরে মীরা।
,
কি হলো মিস মীরা আমার বিষয় আর কিছু জানার আছে। নাকি এবার তোমার বিষয় বলবো।
তোমার জন্মের রহস্য আগেই বলেছি।এবার তোমার এক্স লাভার সাহিল বর্মা সন অফ প্রকাশ বর্মা।বর্মা ইন্ডাস্ট্রির সিইও।যদিও ওদের বিজনেস আমার বিজনেসের ধারের কাছেও নয়। কিন্তু অনিতা বর্মা খুব ভালো মহিলা।তিনি আবার তোমার মা মানে মিনাল আন্টির বেস্টফ্রেন্ড। মৈনাক রাজপূতের সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর এই অনিতা আন্টিই মিনাল আন্টিকে অনেক হেল্প করে। আর তাই সেই কৃতজ্ঞতা বজায় রাখার জন্যই ওনার বখে যাওয়া ছেলের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেন অনিতা আন্টি।
সাহিল নিজের মায়ের বিরুদ্ধে যেতে পারেনি কিন্তু তোমাকেও মন থেকে মানতে পারেনি।কারণ,,,,
,
কারণ আমি ওর টাইপের নই।আমি বেহেনজি।ওল্ড ফ্যাশন।ওল্ড চিন্তাধারা নিয়ে বাঁচি। বিয়ের আগে সেক্সকে প্রাধান্য দিই না। আর তৃণা ঠিক আমার বিপরীত তাই তো তৃনাকে বেছে নিতে ওর একমিনিটও সময় লাগলোনা।
,
তোমার কি আফসোস হচ্ছে সাহিলকে ছেড়ে? গম্ভীরভাবে বললো রাজবীর। কারণ ওর একদমই পছন্দ হচ্ছেনা মীরার মুখে সাহিলের নাম শুনে।
,
একদম না,,,,,বরং থ্যাংকস টু তৃণা।ওর জন্যই আজকে সাহিলের মতো মানুষের আসল চেহারাটা আমি দেখতে পেয়েছিলাম। নাহলে বিয়ে হয়ে গেলে পরে আফসোস করেও লাভ হত না।
,
ওয়েল তাহলে তোমাকে আর একটা সত্যির মুখোমুখি করাই আজকে।
,
কিসের সত্যি!!
,
মিস্টার মৈনাক রাজপূত তোমাকে নিজের সন্তান হিসেবে মেনে নিয়েছে এবং তোমার নামেও ওনার সম্পত্তির একটা অংশ তোমাকে লিখেও দিয়েছেন সেটা নিশ্চই জানো?
,
হম্ম কিন্তু আমিতো ওনাকে এবং ওনার সম্পত্তি দুটোই অস্বীকার করেছি তাহলে সেক্ষেত্রে আমি কিভাবে ওনার সম্পত্তির মালিক হবো।
,
তুমি যতই অস্বীকার করোনা কেনো লিগ্যালি সই ছাড়া তোমার এই স্বীকারোক্তির কোনো ভ্যালু নেই।আর ঠিক এটারই সুযোগ নিতে চেয়েছিল সাহিল।
,
ম,,,মানে,,,,কিসের সুযোগ কি সব বলছেন মিস্টার রাজবীর।
,
হম্ম বড়ো সুযোগ,,,,,,,, তাও সেটা তোমাকে বিয়ে করে লিগ্যালি।
তোমাকে বিয়ে করে রেজিস্ট্রি পেপারের সাথে মিস্টার রাজপূতের দেওয়া সম্পত্তির পেপারেও সই করিয়ে নিতো।ফলে বিয়ের পর তুমি সেচ্ছায় সব কিছুই তোমার স্বামীর নামে লিখে দিতে এমন লেখাই উল্লেখ থাকতো।আর ঠিক বিয়ের তিনমাসের মাথায় তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে তৃনাকে বিয়ে করে নিতো।তখন তুমি তোমার অসহায় মাকে নিয়ে মিস্টার মৈনাকের কাছেই উঠতে আর উনিও ওনার প্ল্যানে কামেয়াব হয়ে যেতো।
,
হোয়াটটটটটটটটটটট,,,,,,,,,, সাহিল এইসব কিছু করতো।আর মিস্টার মৈনাক রাজপূত ওনার কি সম্পর্ক এইসবে।
,
বন্দিনীর সকল পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন - বন্দিনী ভালোবাসার বাংলা গল্প
Thanks for your feedback