Bondini - Session 1 । Episode - 7 । New Bengali Story 2024
এই পর্বে এক আবেগপূর্ণ মুহূর্তে রাজবীর তার ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশ করে, যা মীরার জন্য এক চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। সম্পর্কের এই টানাপোড়েন ও মানসিক দ্বন্দ্ব পাঠকদের মন জয় করবে।,
![]() |
বন্দিনী :- পর্ব - ৭
মীরু,,,,,,,,, কোথায় হারিয়ে গেলি।মিহিরের হালকা ধাক্কায় ধ্যান ভাঙে মীরার।
ও বলে কিছু নয় এমনি দাদাভাই,,,,তুই বরং এখন অফিসে চলে যা আমি বরং মায়ের সাথে দেখা করেই হোস্টেলে ফিরে যাবো। ডক্টর আমি কি একবার মায়ের সাথে দেখা করতে পারি?
,
হম্ম কিছুক্ষন পরেই ভিজিটিং আওয়ার শুরু হবে আর আন্টির ততক্ষনে জ্ঞানও ফিরে আসবে তাই আপনি দেখা করতে পারেন।ওকে আপনারা কথা বলুন আমি রাউন্ডে যাই।মিহু তোকে আমি পরে কল করে নেব।ওকে বাই গাইস।
,
বাই আকাশ।মিহির বললো।তারপর মীরার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,,,, শোন তুই থাকবি ঠিক আছে তবে এখন আমার সাথে একবার ক্যান্টিনে চল,,,কিছু খেয়ে নে তারপর ছোটমায়ের সাথে দেখা করে বরং হোস্টেলে যাবি।আমারও একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে সেটা সেরে নিই।তুই হোস্টেলে ফেরার আগে আমাকে কল করে দিস।
,
একদম না,,,,,, আমি খেয়ে নেব,মায়ের সাথে দেখাও করে নেব কিন্তু হোস্টেলে যাবার সময় তোকে ফোন করতে পারবোনা দাদাভাই।আমি যেমন মানুষ তেমন তুইও মানুষ সেটাকি তুই ভুলে যাস। চুপচাপ আমার সাথে তুইও খেয়ে নিয়ে অফিস চলে যাবি আর মন দিয়ে মিটিং করবি।আমি জানি এখন তোর ওপর অনেক চাপ যাচ্ছে।কন্টিনিউ তোর ফোন বেজে যাচ্ছে সেটা আর কেউ খেয়াল না করলেও আমি করেছি।তাই আমাকে হোস্টেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার ভাবনা থেকে বিরত থাক। আর আমি তো মিহু দির মতো নই যে গাড়ি ছাড়া রাস্তায় পা ফেলতে পারবোনা। ছোট থেকে আমার সবকিছুতেই অভ্যাস আছে।তাই আমাকে নিয়ে না ভেবে তুই মন দিয়ে কাজ কর।
,
পাকাবুড়ির মতো মিহিরকে কথাগুলো বললে মিহিরের মনে এক অপার শান্তি অনুভব হয়।কারণ এই একটা মেয়েই আছে যে ওকে সব থেকে বেশি ভালো বোঝে।আর তাইতো ওর ওপর যে পরিমানে কাজের প্রেসার পরে আছে সেটা এই মেয়েটা ঠিক বুঝে গেছে।নিজের মায়ের পেটের বোনও ওকে কোনোদিন এমনভাবে বোঝেনি।আর তাইতো মিহিরের খুব চিন্তা হয় ওর এই বোনটার জন্য। কিন্তু ও অসহায় ও কিছুতেই এই বোনটার সাহায্য করতে পারছেনা।কারণ মেয়েটা যে ওর দিব্যি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। কিন্তু তবুও ও হাল ছাড়বেনা ঠিক কোনোনা কোনো উপায়ে ও ওর বোনটার হেল্প করবেই।
আকাশ ওর বন্ধু যে ওর এই পুচকে বোনটাকে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা আকাশের চোখ মুখ দেখেই ও বুঝতে পেরেছিল।আর এতে ওর কোনো আপত্তিই নেই। কারণ আকাশকে ও ছোট থেকেই খুব ভালো করে চেনে সাথে ওর পরিবারকেও।তবে এটাও জানে ওর বোন মিহিকাও যে আকাশকে ভালোবাসে।যদিও মিহিকা কোনোদিনও এই ব্যাপারে বলেনি কোনো কথা তবুও ওর কিছু কিছু ব্যবহার সেটারই ইঙ্গিত দেয়। তবে মীরার যদি আকাশকে নিয়ে কোনো প্রব্লেম না হয় তবে ও মিহিকাকে মীরার আর আকাশের লাইফে কোনোদিনও ঢুকতে দেবেনা।তাতে যদি ওকে ওর পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে হয় তাহলেও ও যাবে।
,
কিরে দাদাভাই,,,,এবারে তুই কি ভাবছিস অত।
,
কিছু না চল আগে কিছু খেয়ে নিই তারপর অফিস যাবো।
,
হম্ম ঠিক আছে চল।
,
ওরা ক্যান্টিনের উদ্দেশে বেরিয়ে যেতেই রাজবীরের সামনে এসে একজন গার্ড ওকে সুপারের রুমের দিকে নিয়ে চলে যায়।
,
,
কেবিনের ভিতরে ঢুকেতেই সুপার নিজের চেয়ার ছেড়ে হন্তদন্ত হয়ে ওর সামনে এসে করজোড়ে নমস্কার করে বললো,,,,,,,,, প্লিজ আসুন মিস্টার সিংঘানিয়া।আমিতো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা যে আপনি আমার হসপিটালে এসেছেন।আচ্ছা আমি কি কোনো রকমের ভুল করে ফেলেছি।দয়া করে আমাকে জানান আমি নিজের ভুলগুলো শুধরে নিতে চাই।
,
অবশ্যই ভুল করেছেন। গম গমে হাস্কি গম্ভীর টোনে বললো রাজবীর।
,
সামনে দাঁড়ানো লোকটার ততক্ষনে কানের পাস দিয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে যদিওবা রুমের ভিতরে এসির টেম্পারেচার 20 ডিগ্রি হোকনা কেন।সামনে যিনি বসে আছেন তার ক্ষমতা সম্বন্ধে জানেনা এমন মানুষ গোটা ইন্ডিয়াতে নেই।তাই খুব সাবধানে একবার নিজের গলার শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে উঠলো,,,,,স্যার,,,,
,
কল প্রেসিডেন্ট।ডেভিড সুপারকে আগাম সতর্কতা করে বলে উঠলো।
,
প্রে,,,প্রেসিডেন্ট,,,,,আপনি যদি দয়া করে বলেন আমার ভুলটা।
,
রাজবীরের ইশারায় ডেভিড বললো,,,,মীরা রয়ের এখানে কে ভর্তি আছেন।
,
মীরা রয় নামটা শুনে কিছুক্ষন অবাক হয়ে উনি রাজবীরের দিকে তাকায় তারপর নিজেকে সামলে বলে আসলে এইসব কিছু আমার সেক্রেটারি বলতে পারবে ,যদি অনুমতি দেন তো তাকে কি একবার ডাকতে পারি।
,
হম্ম ডাকুন ডেভিড বললো।
,
সুপার ফোন করলে একটা ছেলে তাড়াতাড়ি করে ওনার কেবিনে আসে।ছেলেটার মুখে ভয়ের চিহ্ন স্পষ্ট কারণ কেবিনে ঢোকার সময় স্বশস্ত্র কিছু গার্ডদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে আর ভিতরে ঢোকার সময়ও কিছু গার্ডের সাথে একজন এমন মানুষকে বসে থাকতে দেখেছে যার সামনে ওর বস পর্যন্ত হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে আছে।সেই ব্যক্তিটি যে বিশেষ কেউ তাতে কোনো সন্দেহই নেই ছেলেটার।
,
সুমন,,,,,,,,, আমাদের এখানে মীরা রয়ের কে ভর্তি আছে সেটা আমাকে এক্ষুনি জানাও।
,
সুপারের নাম শুনে ছেলেটা আশ্চর্য্য হয় কিন্তু তারপরেই একটুও দেরি না করে নিজের ট্যাবে দ্রুত কিছু টাইপ করতেই ছেলেটার মুখে হাসি ফুটে আসে।
ও ট্যাব দেখতে দেখতেই বলে,,,,,,,,, মীরা রয়ের মা মিনাল রয় ভর্তি আছেন।ওনার হার্টের সমস্যা হয়েছে।ওনাকে কিছুদিনের মধ্যেই অপারেশন করাতে হবে।কিন্তু টাকার জন্যই ওনার অপারেশন এখন বন্ধ হয়ে আছে। আর,,,,
,
সুমনের কথা শুনে রাজবীরের ভ্রু কুঁচকে যায়।ও ডেভিড এর দিকে তাকালে ডেভিড সুপারকে বলে,,,,,,, কত টাকা লাগবে ওনার অপারেশন করতে।
,
সুপারের বদলে সুমনই বললো,,,,,,,, 10 লক্ষ টাকা লাগবে ওনার অপারেশনের জন্য। কিন্তু ওনার অপারেশন আগেই হয়ে যেতো শুধুমাত্র মিস মীরার জন্যই আটকে আছে।
,
আর সেটা কি জন্য,,,,,
,
আসলে ওনার দাদা মিস্টার রাজপূত নিজেই একবার সুপারের সাথে কথা বলেছিলেন অপারেশনের জন্য।কিন্তু মিস মীরা সেই প্রস্তাব শুনেই একবারেই নাকোচ করে দেন।তাই এখন ওনার কাছে মাত্র একমাস সময় আছে তার মধ্যে অপারেশন না হলে ডক্টর সেন নিজেই ওনার অপারেশন করিয়ে দেবে।তাতে যদি মিস মীরার আপত্তিও থাকে তবুও তিনি শুনবেননা।
,
রাজবীর মনে মনে রেগে যায় আকাশের কথা শুনে।ওর যে কেনো এই ব্যাপারে ইন্টারেস্ট সেটা কিছুক্ষন আগেই মীরার হাত ধরে কথা বলার সময়ই বুঝতে পেরেছিল।তাই ও রাগী চোখে ডেভিড এর দিকে চাইলে ডেভিড সুমনকে বলে,,,,,,,এই ডক্টর সেনের পুরো ডিটেইলস আমাকে দিন।
আর হ্যাঁ আজকের পর থেকে এই হসপিটালের মালিক মিস্টার রাজবীর সিংঘানিয়া। আর এই হসপিটালের নতুন সুপার তুমি ,,,সুমন রাইট তোমার নাম।
,
ডেভিডের মুখের কথা শেষ হবার সাথে সাথেই সুমনের হাত থেকে ট্যাবটা মাটিতে পরে যায়।আর সুপার সেতো কাঁদো কাঁদো অবস্থায় রাজবীরের পায়ের সামনে এসে বসে পরে।
কিন্তু ওর গার্ডেদের জন্য সুপার রাজবীরকে টাচ করতে পারেনি।
,
এতো কান্নার কিছু হয়নি মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা।আপনার এই হসপিটালের এখনকার বাজারে যা মূল্য তার তিনগুন দাম আমি আপনার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়েছি।
তারপর সুমনের দিকে তাকিয়ে ওকে বলে,,,,সুমন তো তোমার নাম।
,
সুমন ভয় ভয় ঢোক গিলে মাথা নাড়ায়।
,
দ্যাখো আজকের পর থেকে এই হসপিটালে বিনা চিকিৎসায় যেন কোনো মানুষ অবহেলিত নাহয় সেটা দেখার দায়িত্ব তোমার। কারণ আমি চাইনা কেউ কোনো মানুষের অসয়ত্তার সুযোগ নিয়ে তাকে হেল্প করুক। আর দুই আজকের পর থেকে আমি যেন ওই আকাশ সেনকে এই হসপিটালের আসে পাশে না দেখি।
আর হ্যাঁ মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালার সমস্ত টাকা ওনার ব্যাংকে ট্রান্সফার করে দিয়ে ওনাকে এখান থেকে আজকেই রিজাইন দিয়ে নিজে এই পদে অধিষ্টিত হবে। এর অন্যথা হলে,,,,,
,
হ,,,হবে না প্রেসিডেন্ট।আমি এক্ষুনি সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
,
সুমন মেঝে থেকে দ্রুত ট্যাবটা নিয়ে রাজবীরের পাঠানো টাকাগুলো ট্রান্সফার করে দেয় মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালার একাউন্টে।তারপর একটা রেজিস্নেশন লেটার রেডি করে ডাক দেয় ডক্টর আকাশ সেন কে।
,
,
ক্যান্টিন থেকে ফেরার পর মায়ের কেবিনের দিকে যাওয়ার সময় কেবিনের বাইরে কিছু স্বশস্ত্র গার্ডদের দেখে থমকে যায় মীরার পা।কারণ বোঝার মতো সময় পায়না তাই দ্রুত কেবিনের মধ্যে ঢুকতে গিয়েই সামনের মানুষটাকে দেখে হোঁচট খায় তার ভাবনা চিন্তারা রীতিমতো।
ওতো স্বপ্নেও ভাবেনি সামনে বসা মানুষটাকে ও আবার কোনোদিন দেখতে পাবে।
আশ্চর্য্য হয়ে তাকিয়ে দেখছে কি সুন্দর ভাবে ওর মায়ের সাথে ওই মানুষটা হেসে হেসে কথা বলছে,যেন কতদিনের পরিচয়।
,
মীরু,,,,এসেছিস মা তুই।আয় আমার কাছে আয়।মীরার মা মিনালদেবী তার মেয়েকে কাছে ডাকলেন।
,
মীরা যত এগোচ্ছে ওর বুকের কম্পনও তত জোরেই দৌড়োচ্ছে।একদম মায়ের সামনে এসে দাঁড়ালে সামনের মানুষটা হেসে ওর দিকে চায়।
,
সেই গম গমে গম্ভীর টোনে মীরাকে ডাকে,,,,,,,,হ্যালো মীরা,,,,আর ইউ ওকে। গভীর দৃষ্টিতে তাকায় ও মীরার দিকে।
,
রাজবীর সিংঘানিয়া,,,,,,,,,,,,,,
,
হালকা হেসে রাজবীর বললো হম্ম তোমার মনে আছে তাহলে আমাকে।
,
ভোলার মতো কি এমন কাজ কিছু করেছেন যে ভুলে যাবো।মীরাও তীক্ষ্ণ ভাবে জবাব দিলো রাজবীরকে।আসলে ওর মাথায় এখন একটাই কথা ঘুরছে,,রাজবীর হঠাৎ কেনো এখানে তাও ওর মায়ের কাছে।ও কি মা কে সব কিছু বলে দিয়েছে কাল রাতের কথা।যদি বলে দেয় তাহলে,,,তাহলে মীরা কি জবাব দেবে ওর মাকে।
,
মীরার মাথায় এইসব প্রশ্ন যখন ঘুরছিলো রাজবীর ওকে অবাক করে দিয়ে মিনালদেবীকে বলে,,,,আন্টি আমি এখন আপনার মেয়ে মানে মীরাকে কি একটু বাইরে নিয়ে যেতে পারি ,,আসলে আমার কিছু কথা ছিলো ওর সাথে ওর স্টাডির ব্যাপারে।
,
তোমার বন্ধু যখন তখন ওকে তুমি নিয়ে যেতেই পারো তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।মীরা তুই বরং রাজের সাথে কিছু কথা বলে নে, আমি ততক্ষন রেস্ট নিয়ে নিচ্ছি । কথা হয়ে গেলে একবার আসবি আমার কাছে।
,
মীরার তো মাথায় কিচ্ছু ঢুকছেনা এইসব কি হচ্ছে।এদিকে ওদের কেবিনে একজন বয়স্ক ডক্টর আসে মীরার মাকে চেকাপ করতে।আর যিনি আসেন সেই ডক্টরকে মীরা খুব ভালো করে চেনে।উনি ইন্ডিয়ার বেস্ট হার্ট সার্জেন ডক্টর এস,রামানুজ।ওনার ফিস তো দূরে থাক ওনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ারও ভাগ্যে থাকা চাই।
,
হতবম্ভ মীরার হাতটা ধরে রাজবীর ওকে বের করে আনলো কেবিন থেকে। তারপর সুমনকে বলে ও একটা রুমের মধ্যে নিয়ে যায় মীরাকে।
,
এক ঝটকায় হাতটা রাজবীরের হাতের মধ্যে থেকে বের করে আনে মীরা।
চিৎকার করে বললো,,,,,,,,,,এইসবের মানে কি মিস্টার রাজবীর। আপনি এখানে তাও আবার আমার মায়ের কেবিনে,,,,এক মিনিট আপনি কি,,,,আপনি কি মাকে কালকের ঘটনাটা বলে দিয়েছেন।
,
একেতো মীরা ওই ভাবে ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে তার ওপর ওর কথা না শুনেই ওকে দোষ দিয়ে যাচ্ছে।রাজবীরের মাথাটা আস্তে আস্তে গরম হতে শুরু করে কিন্তু ও মীরাকে কিছু বলেনা । চুপ করে মীরার দিকেই তাকিয়ে থাকে।
,
অধৈর্য্য মীরা রেগে গিয়ে রাজবীরের শার্টের কলার চেপে বলে,,,,,,,আপনাকে তো আমি বলেছিলাম এই বিষয়ে আপনি আমি ছাড়া আর কেউ কোনোদিন জানবেনা,,তাহলে আপনার সাহস হলো কি করে আমার মাকে সব বলার।স্পিক আউট ড্যাম ইট। রাগে থর থর করে কেঁপে উঠলো মীরা ।
,
আজ অব্দি রাজবীরের সামনে কেউ কোনোদিন চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলা তো দূর জোরে আওয়াজও করেনি।সেখানে ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই পুচকি মেয়েটা ওর কলার ধরে ওকেই রাগ দেখাচ্ছে।ওর কাজের কৈফিয়ত চাইছে।মীরার জায়গায় এটা যদি অন্য কেউ হত তাহলে তার স্থান হত সোজা মর্গ।কিন্তু রাজবীর খুব শান্ত ভাবেই মীরার এই রাগী চেহারাটা উপভোগ করছিলো।( একদম পারফেক্ট,,,,এই নাহলে আমার সিংহী। এই হবে আমার সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী।আর আমার এট এনি কস্ট একেই চাই।)
,
এই মিস্টার রাজবীর আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন আমার কথার জবাবের বদলে আপনি হাসছেন? কি হলো বলুন আপনি এমন কেনো করলেন।রাজবীরের কলারটা আবার ঝাকিয়ে মীরা বললো।
,
রাজবীর মীরার হাতদুটো ধরে ওকে এক ঝটকায় টেনে দেওয়ালের দিকে ঠেস করে দার করায়।তারপর ওর মুখের সামনে মুখ নামিয়ে গম গমে হাস্কি অথচ নরম গলায় বললো,,,,,,,, আমাকে উত্তর দেওয়ার সময়টা কখন দিলে যে আমি নিজের জন্য কিছু বলবো।
,
একেতো ওইভাবে ওকে দেওয়ালের সাথে আটকে রেখেছে ,তার ওপর রাজবীরের এমন ভাবে ওর কাছে এসে কথা বলায় ওর প্রতিটা নিঃশ্বাস মীরা নিজের ওপর ফিল করতে পারছে।সেই স্পর্শ যেটা ও চোখ বন্ধ করেও বুঝতে পারবে যেখানে ভালোবাসা আর যত্ন ছাড়া অন্য কিছু নেই।আর রাজবীরের নেশা ধরানো গলার আওয়াজে মীরার যেন নিজেকে অবশ মনে হতে লাগলো।
,
রাজবীর মীরার প্রত্যেকটা এক্সপ্রেশন খুব ভালো ভাবেই লক্ষ্য করছিলো। ওর চোখ মীরার মুখের প্রত্যেকটা ভাব লক্ষ্য করছিলো।রেগে যাওয়ার ফলে মীরার নাকের সামনের অংশ লাল হয়ে গেছে এবং ঠোঁটের ওপরে গোঁফের কাছে ছোট ছোট ঘামের বিন্দু দেখা যাচ্ছে।মীরার ঠোঁটের ঠিক নিচে একটা ছোট্ট তিল আছে।যেটা দেখার ফলে রাজবীর এবার একবার একটা শুকনো ঢোক গেলে। নিজের চোখ একবার বন্ধ করে নিজের অদ্ভুদ ডিজায়ার কে দমন করার চেষ্টা করে।
,
আমাকে ছাড়ুন।লিভ মাই হ্যান্ড মিস্টার রাজবীর।
,
না,,,,,,,,,,,, ছাড়বোনা।যতক্ষননা আমার কথা শুনছো ততক্ষন আমি তোমাকে এইভাবেই আমার কাছে রাখবো।
,
আর কি শোনার আছে আমার যা বলার তো সেটা আপনি আমার মাকে বলেই দিয়েছেন।তাই আপনার বাজে কথা শোনার মতো টাইম আমার নেই।
,
ওহ রিয়েলি আমার কথা ,আমার ছোঁয়া তোমার বিরক্ত লাগছে তাহলে ওই ডক্টর যখন তোমার হাত ধরেছিল তখন কেনো হেসে হেসে কথা বলছিলে।
,
রাজবীরের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে মীরা। আকাশ যখন ওর সাথে ওর হাত ধরেছিল তখন সত্যিই ওর খুব অস্বস্থি হচ্ছিলো।কিন্তু ও দাদাভাইয়ের সামনে কিছু বলতে পারেনি।কিন্তু এই কথাটা এই মানুষটা কিভাবে জানলো।
,
আমি কিভাবে জানলাম সেটাই ভাবছো তো।ওয়েল,,,, আমি আমার নিজের জিনিসের প্রতি এক্সট্রা নজর রাখতে জানি।
,
এক্সকিউজমি জিনিস,,,,,কে জিনিস ,,,কি জিনিস মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ মিস্টার রাজবীর।আপনি বোধহয় ভুলে গেছেন আমি আপনার কেউ হইনা।
,
উমম হু আমি না ভুলে তুমি গেছো মিস মীরা।আমিতো আজকেই তোমাকে জানিয়েছি যে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।আর এটাও আমি আন্টিকে মানে তোমার মাকেও একটু আগেই জানিয়ে দিয়েছি।
,
হোয়াটটটটট,,,,,,, আপনি,,,আপনি আমার পারমিশন ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত নেন কি ভাবে। আমাকে কি আপনার হাতের পুতুল মনে হয় ।আপনি যেমন ইচ্ছে হবে তেমন ভাবে নাচাবেন। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইনা এটা আগেও বলেছি আর আজকেও বললাম।
,
আমিও বলেছি রিজেন দাও তাহলেই বুঝবো কেনো আমাকে রিজেক্ট করছো।
,
সেটা বলতে আমি বাধ্য নই। প্লিজ মিস্টার রাজবীর এমনিতেই আমার লাইফে অনেক প্রব্লেম আছে আপনি আর আমার লাইফে প্রব্লেম ক্রিয়েট করবেননা।
,
মীরা,,,,,,, তাকাও আমার দিকে,,,,,,,,,, রাজবীর খুব সফ্টলি মীরাকে ডাকলো।
,
এমন ডাকে মীরা না চাইতেও রাজবীরের চোখে চোখ রাখে,,,,,ও হারিয়ে যায় ঐ নীল গভীর সমুদ্রে।
,
রাজবীরও হারিয়ে যায় মীরার কালো গভীর শান্ত দীঘির মতো বড়ো বড়ো চোখের মাঝে।
( কেন বুঝতে চাইছোনা রু আমি যে সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।আমি চাইলেও তোমার ভালোবাসার নেশা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারবোনা। তোমার স্পর্শ, তোমার গায়ের এই চন্দনের গন্ধ আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।তোমার ঠোঁটের এই কালো ছোট্ট তিলটা আমার শরীরকে ও মনকে আরো আরো বেশি করে তৃস্নার্ত করে তুলেছে।আমি জানি আমার এই পিপাসা সারাজীবনেও মিটবেনা।প্লিজ আমাকে একসেপ্ট করে নাও রু। ) মনে মনে বললো রাজবীর।
,
রাজবীরের নেশাময় আবেগ ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে মীরা যেন নিজেকেই খুঁজে পাচ্ছে। রাজবীরের চোখে নিজের জন্য অসীম ভালোবাসা ও অনুভব করতে পারছে।কিন্তু ও জানে রাজবীরের মতো মানুষের সাথে ওকে যে মানায়না।তাইতো নিজেই ওর চোখ থেকে চোখ নামিয়ে নেয়।
,
রু,,,,,,,
,
চমকে তাকায় মীরা,,,,,,, কি,,,কি বলে ডাকলেন আমাকে আপনি।
,
রু,,,কেন আমার দেওয়া নামটা পছন্দ হয়নি।
,
চোখ বন্ধ করে নেয় মীরা একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে ওর চোখ থেকে।এই পাগল ছেলেটাকে কিভাবে বোঝাবে ও কেনো ওকে এতটা ভালোবাসছে।কেনো এতো দুর্বল করে দিচ্ছে ও।ঠোঁটটা দাঁতের ফাঁকে চেপে প্রানপনে নিজের কান্না চাপার চেষ্টা করতে থাকে মীরা।
,
একটা হাত মীরার গালে রেখে ওর চোখের জলটা মুছিয়ে দেয় রাজবীর।
প্লিজ রু ডোন্ট ক্রাই। আমার সহ্য হয়না তোমার চোখের জল।আমি যদি অন্যায় কিছু করি দেন আমাকে বল মারো বাট প্লিজ কান্না করোনা। তোমার চোখের জল ভীষণ দামি আমার কাছে।
,
জল ভরা চোখ খুলে তাকায় মীরা রাজবীরের দিকে।কাপা কাপা গলায় বলে,,,,,,,, আ,,পনি জা,,নেন না আমার বি,,বিষয়ে।তাই আমাকে বিয়ের জন্য বলছেন।দেখুন আমার টাচ ছাড়া আমার আর কিছুই নেই আপনাকে দেওয়ার মতো।বরং আমার জন্য সমাজে আপনাকে অনেক বাজে বাজে কথা শুনতে হতে পারে।
তাই প্লিজ আপনি চলে যান এখন থেকে।আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
,
মীরার মুখটা দুহাতের মধ্যে নিয়ে রাজবীর বলে,,,,,,,,,,, মৈনাক রাজপূত তোমার বায়োলজিক্যাল ফাদার এম আই রাইট।
,
বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালো মীরা রাজবীরের দিকে।
ওর এক্সপ্রেশন দেখে রাজবীর হেসে বলে,,,,,,,,আমি তোমার বিষয় সব জানি ।শুনতে চাও,,,,,ওয়েট বস এখানে,,,,,,,,মীরার হাত ধরে ওকে সোফার কাছে নিয়ে যায় রাজবীর।তারপর খুব যত্নভাবে বসিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে।তারপর ওর একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে,,,,,,,,,, মিনাল আন্টি মৈনাক রাজপূতের অফিসে জব করতো।তারপর মিহির রাজপূতের মা মানে সোনাম রাজপূতের মৃত্যুর পর মৈনাক রাজপূতের নজরে আসে মিনাল আন্টি। দিনের পর দিন ভালোবাসার মিথ্যে নাটক করে মিনাল আন্টিকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখায়। সবাইকে লুকিয়ে মন্দিরে বিয়ে করে মিনাল আন্টিকে। যেহেতু আন্টির বাবা বা মা কেউ ছিলেননা সেহেতু ওনার পক্ষে সাক্ষী হিসেবেও কাউকে পাননি একমাত্র অফিসের এক বন্ধু সীমা দেবী ছাড়া। বিয়ের পর লোক চক্ষুর আড়ালে মৈনাক রাজপূত প্রায়দিনই রাত কাটাতো মিনাল আন্টির সাথে এস আ লিগ্যাল হাসবেন্ডের মতো। আন্টি যতবারই বলেছে ওনাকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যেতে ততবারই ঐ মৈনাক রাজপূত ছেলে মেয়েদের দোহাই দিয়ে ওনাকে এড়িয়ে গেছেন। এই ভাবেই সব চলছিলো কিন্তু বাধ সাধলো যখন ওই মৈনাক রাজপূত জানতে পারলো মিনাল আন্টি প্রেগনেন্ট।
নিজের সোর্স কাজে লাগিয়ে চেকাপের নাম করে নিয়ে গিয়ে লিঙ্গ পরীক্ষা করালো। যদিও ওর এইসব কাজে ওকে সাহায্য করেছে ওর সেক্রেটারি রাঘব সিনহা। তাই মৈনাক রাজপূত যখন জানতে পারলো গর্ভের সন্তান একটা মেয়ে তখন এই ঝামেলা আর রাখতে চায়নি।
,
_______চলবে।
Thanks for your feedback