Bondini - Session 1 । Episode - 6 । New Bengali Story 2024
মীরার জীবনে নতুন মোড়! মীরার সামনে দেখা দেয় পুরোনো পরিচিত রাজবীর, যার চোখে তার প্রতি এক গভীর আকর্ষণ। হাসপাতালের ডক্টর আকাশ সেন বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিলে মীরার পুরোনো অভিজ্ঞতা তার মনে দ্বিধা ও সংশয় তৈরি করে। মীরার জীবনে কি নতুন কিছু ঘটতে চলেছে? বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও বিশ্বাসের মধ্যে মীরা কি নিজের পথ খুঁজে পাবে?
বন্দিনী :- পর্ব -- ৬
কাঁচ ঘেরা কেবিনের বাইরে ছল ছল চোখে দাঁড়িয়ে আছে মীরা। ভিতরে যে শুয়ে আছে সে এই মেয়েটার একমাত্র শেষ সম্ভল। কোনোকিছুর বিনিময়ে এই শেষ আশ্রয়টা মেয়েটা কিছুতেই হারাতে দেবেনা। কিছুতেই ওই মানুষটার সামনে নিজের এবং মায়ের সম্মানকে মাথানত করতে দেবেনা।তারজন্য যদি কখনো নিজেকে বিক্রিও করে দিতে হয় তবে ও হাসতে হাসতে সেটাই করবে।
,
দূর থেকে মীরাকে একটা কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো রাজবীর।মেয়েটা যে কাঁদছে সেটা ওর বার বার চোখ মোছার জন্য স্পষ্টই বুঝতে পারছে।কিন্তু কে আছে ওখানে আর কেনই বা মেয়েটা কাঁদছে সেটা ও বুঝতে পারছে না।
কিছুক্ষন পরেই রাজবীর দেখলো একটা কেবিন থেকে মিহির ও একটা ডক্টর কথা বলতে বলতে বেরিয়ে আসছে।ওরা দুজনেই মীরার সামনে এসে দাঁড়ালো।
,
মীরার কাঁধে হাত রেখে মিহির বললো,,,,,,,বোন,,, ছোটমা এখন আউট অফ ডেঞ্জার, ,, আর তুই ভাবিসনা ডক্টর তো বলেছেন কিছুটা সময় আছে তোর হাতে অপারেশনের জন্য,, তাই এখন আর এই নিয়ে ভাবিসনা।
,
মীরা ডক্টরের দিকে তাকিয়ে চোখের জলটা মুছে বললো,,,,,, কতদিন সময় আছে আমার হাতে।
,
ওই একমাসের মতো, কিন্তু এর বেশি সময় আমি আপনাকে দিতে পারবোনা।
,
থ্যাংক ইউ ডক্টর,,,,,আমার কাছে এইটাই অনেক। তবে আপনার কাছে আমার দুটো রিকোয়েস্ট আছে।দয়া করে সেটা যদি শোনেন।
,
ডক্টর মীরার হাতদুটো ধরে নিশ্চিন্ত হওয়ার ভঙ্গিতে বললো,,,,,,,আপনি নির্ভয়ে সব বলতে পারেন।
,
এদিকে রাজবীরের রাগের পারদ উত্ততর বেড়েই যাচ্ছিলো।প্রথমে মিহির,তারপরে এই ডক্টরও মীরাকে টাচ করেছে।তাই না চাইতেও ওর মাথার শিরা গুলো ফুলে উঠতে শুরু করে।
,
পাশে দাঁড়ানো ডেভিড সেটা ভালোই বুঝতে পারছে তার বসের রাগের কারণটা।তাই ও আর অপেক্ষা না করে দ্রুত হসপিটালের সুপারের রুমের দিকে ছুটতে শুরু করে। তবে যাওয়ার আগে একবার ওই ডক্টরের নামটা ওর গলার আই ডি থেকে পরে নিতে ভুল করেনা।
,
ডক্টর,,,,,আমি চাইনা এরপর মিস্টার রাজপূত বা ওনার কেউ এসে আমার মায়ের সাথে দেখা করুক।একমাত্র দাদাভাই ছাড়া। আর দ্বিতীয়ত মিস্টার রাজপূতদের কোনো রকম হেল্প আমার মায়ের জন্য লাগবেনা,সেটা টাকা হোক বা অন্যান্য ফেসিলিটিস।প্লিজ ডক্টর আমার এই দুটো অনুরোধ আপনি রাখুন।
,
ডক্টর একবার মিহিরের দিকে তাকালে মিহির ওকে চোখের ইশারায় আসস্ত্ব করলো যে ঠিক আছে।
,
ওকে মিস মীরা আমি আপনার দুটো অনুরোধই রাখলাম । কিন্তু আপনাকেও আমার একটা অনুরোধ রাখতে হবে।
,
সপ্রশ্ন ভাবে মীরা ডক্টরের দিকে তাকালে ডক্টর বললো,,,,,,, আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
,
ডক্টরের এমন একটা কথা শুনে স্বাভাবিক মীরা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালে ডক্টর মৃদু হেসে বললো,,,,,,,, আমার যা প্রফেশন সেখানে কাজ করতে করতেই অর্ধেক সময় চলে যায়।তাই আলাদা করে কোনো বন্ধুত্ব কারোর সাথেই সেইভাবে গড়ে ওঠেনি।আমার বন্ধু বলতে খুব ক্লোস তিনজন আছে।এক আমার মা ও বাবা ,,,আর দুই এই যে তোমার পাশে যে দাঁড়িয়ে আছে তোমার দাদাভাই সে আমার অনেক ছোটবেলার ফ্রেন্ড।আমি আজকেই জানতে পারলাম তুমি মিহুর বোন হও।সে ক্ষেত্রে তুমিও আমার বোনেরই মতো।তাও আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই। কি হবে তো আমার বন্ধু।
,
ডক্টর আকাশ সেন যে ওর দাদাভাইয়ের বন্ধু হয় সেটা শুনে মীরার খুব ভালো লাগে।কিন্তু ওর সাথে যে আকাশ বন্ধুত্ব করতে চায় এই ব্যাপারটাতে ওর মন সায় দেয়না ঠিক।কারণ একটা মেয়ে একটা ছেলের চোখের মুগ্ধতা ঠিক বুঝতে পারে।
মীরাও আকাশের চোখে ওর জন্য সেই দৃষ্টি দেখেছে।আর দেখেছে বলেই ওর মন এই বন্ধুত্বে সারা দিতে চাইছেনা।কারণ এইরকম করেই তো আগেও একবার বন্ধুত্ব করেছিল মীরা সাহিলের সাথে। যার দাম আজকে ওকে ওর ভারজিনিটি হারিয়ে সেই মূল্য চোকাতে হয়েছে।
,
মীরা ইতস্তত করে আকাশের হাত থেকে ওর নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলে,,,,,,,,,,,, আপনি অনেক ভালো মনের মানুষ ডক্টর সেন তাই আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চান।তবে কি জানেন আমার না এইসব বন্ধুত্ব বলুন বা অন্য কিছু সেই সবে বিশ্বাস উবে গেছে। তাই আর নতুন করে কারোর সাথে কোনোরকম সম্পর্কে যেতে আমার ভয় লাগে।সেটা বন্ধুত্ব হোক বা অন্য কিছু। আমাকে ক্ষমা করবেন আমি আপনার এই প্রস্তাবটা রাখতে পারছিনা।আমি জানি সব মানুষ সমান হয়না তবুও আমি এখন এতটাই বিভ্রান্ত যে কোনো কিছুর জন্যই আমি তৈরী নই। তাছাড়া সবকিছুর আগে আমার মায়ের শরীর।মাকে যতদিননা আমি সুস্থ সবল দেখছি ততদিন আমি কোনো কিছুতেই মন দিতে পারবোনা।
,
,
মিহির কিছু বলতে যাবে তার আগেই আকাশ ওকে বাঁধা দিয়ে বললো,,,,,,,,,, ইটস ওকে মিস মীরা,,,আমি বুঝতে পারছি এমন কিছু ঘটনা হয়েছে যার জন্য আপনার মনে অবিশ্বাস তৈরী হয়েছে।আমি আপনাকে জোর করবোনা,,তবে আমি অপেক্ষা করবো যখন আপনার মনে হবে আমাকে আমার বন্ধুত্ব কে বিশ্বাস করতে আপনি তখন নাহয় আমার প্রস্তাবে সারা দেবেন। কিন্তু প্লিজ আপনি আর বেশি চিন্তা করবেননা।আন্টিকে আমি দেখেছি উনি এখন স্টেবেল আপনি এখন বাড়ি যেতে পারেন।ইউ নিড আ প্রপার রেস্ট টু ডে।ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে আপনাকে।
,
মীরা একটু উদাস হয়ে পরে কারণ কয়েক ঘন্টা আগে আরো একজন ওকে এই সেম কথাই বলেছিলো।রেস্ট নিতে ফ্রেশ হয়ে যেতে।কিন্তু মীরা পারেনি তার কথা শুনতে।ওই মানুষটা সামনে ওর চোখে চোখ রাখলেই মীরার মনে একটা শিরশিরানি তৈরী হচ্ছিলো সেটা কেনো হচ্ছিলো ও বুঝতেই পারছিলো না।কিন্তু মানুষটার উপস্থিতিতে ওর মনে ও শরীরে যেন একটি অস্বস্তি টের পাচ্ছিলো।যেমন এখন পাচ্ছে।ওর মনে হচ্ছে ওর আসে পাশে ওকে কেউ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে খুব ভালো করে।অথচ ও চারিদিকে একবার ভালো করে চোখ বুলিয়েও বুঝতে পারছেনা কে বা কারা করছে।
আর আকাশ যখন ওর হাতটা ধরে ছিলো তখনও ওর খুব বিরক্ত লাগছিলো।কারণ সেই টাচটা যে ওই মানুষটার মতো নয়।রাজবীরের স্পর্শে ও যে ভরসা,যে ভালোবাসা,যে অধিকারবোধ আর যে নিষ্কামতা পেয়েছিল সেটা ও আকাশের ছোঁয়ায় পায়নি।এমনকি আজ অব্দি সাহিলও যখন ওকে স্পর্শ করতো নানা অছিলায় তখনও ও এইরূপ নিষ্কাম স্পর্শ অনুভব করেনি।নিজের ভাবনার প্রতি নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে মীরা।কারণ রাজবীরের জন্যই আজকে ও ওর ভারজিনিটি হারিয়েছে কিন্তু সেটাও দুজনেই সম্পূর্ণ নেশার ঘোরে। তবুও ও একা রাজবীরকে দোষী করতে পারছেনা।কারণ ওই মানুষটা নিজেও ওরই মতো এক অবস্থায় অবস্থান করছে।রাজবীরের আজব স্কিন ডিজিসের জন্যই ও আজ পর্যন্ত কোনো নারী শরীরের সংস্পর্শে আসেনি একমাত্র মীরা ছাড়া।আর তাইতো রাজবীর ওকে বিয়ের অফার পর্যন্ত করেছে।কথাটা ভাবতে ভাবতেই ওর গাল লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।কারণ ওই সময় অর্ধনগ্ন অবস্থায় রাজবীর ওকে বিয়ের প্রপোজাল দেয়।
কিন্তু আগের দিন সাহিল ও তৃণার দেওয়া ধোকা টা থেকে কিছুতেই নিজের মনকে বের করতে পারছিলোনা ও তাইতো রাজবীরের প্রপোজালকে ও একবারেই নাকোচ করে দেয়। এমনিতেই ছোট থেকে ওর জন্ম নিয়ে অনেক অপমান শুনতে হয়েছে স্কুল,কলেজে তাই ও আর নতুন করে অন্যের কাছে নিজেকে ও নিজের মাকে ছোট করতে চায়না।সেটা আকাশ হোক বা রাজবীর।
,
,,,,,,,,,,,,,চলবে
Thanks for your feedback