Bondini - Session 1 । Episode - 5 । New Bengali Story 2024
মীরা ও মিহিরের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা, মায়ের অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ, আর পারিবারিক জটিলতার মাঝে মীরার আত্মসম্মানকে কেন্দ্র করে পুরো কাহিনী আরও আকর্ষণীয় হয়েছে
বন্দিনী :- পর্ব -- ৫
মীরা আর মিহিরের কথার মাঝেই মীরার ফোনটা বেজে উঠলো। মীরা ফোন বের করে দেখলো হসপিটাল থেকে কল আসছে।তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,,,,,,,,হ্যালো ডক্টর,,,আমার মা,,,,,,,
,
কিহ,,,,,,, হঠাৎ কি হলো?
,
না না আমি এক্ষুনি আসছি।প্লিজ আপনারা ট্রিটমেন্ট শুরু করুন আম,,,আমি আসছি এক্ষুনি।
,
মীরা তাড়াতাড়ি ফোনটা ব্যাগে রেখে ওখান থেকে যেতে গেলে মিহির ওর হাত টেনে ধরে বললো,,,,,,কি হয়েছে বোন তোকে এমন অস্থির লাগছে কেন।আর হসপিটালের কথা কেন বললি,,,,কি হয়েছে ছোট মায়ের।
,
দাদাভাই,,,,,মায়ের আবার একটা হার্ট এটাক হয়ে গেছে।আমি এখন কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।ছলছল চোখে মেয়েটা বললো।
,
কিহ,,,ছোট মায়ের এতটা শরীর খারাপ আর তুই আমাকে একটাবারের জন্যও বলতে পারিসনি।আমি কি তোর এতটাই পর।
অভিমান মিশ্রিত কথাগুলো বললো মিহির।
,
মিহিরের হাত দুটো ধরে মীরা বললো,,,,,,না রে দাদাভাই আমি ,,,আমিতো তোকে ফোন করেছিলাম সেদিন যেদিন প্রথম মা অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল।খুব ভয় পেয়েছিলাম জানিস।এই পৃথিবীতে একমাত্র মা ছাড়া যে আমার কেউ নেই।আর থাকার মধ্যে তুই ছিলিস।তাইতো সেদিন আমি তোকে ফোন করি ,,,কিন্তু।
,
কিন্তু,,,,,কিন্তু কি মীরু।
,
কিন্তু তখন মনে হয় তুই তোর রুমে ছিলিসনা।তোর ফোনটা মিহিকা দি রিসিব করে।আর,,,,,
,
মিহিরের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় এটা শুনে।কারণ ও নিজের বোনকে খুব ভালো করেই চেনে।মিহিকা যে মীরাকে একেবারেই সহ্য করতে পারেনা সেটা ওর ব্যবহার দেখেই বোঝা যায়।প্রত্যেকটা মুহূর্তে মেয়েটাকে অপমান করতে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করে না মিহিকা। তাই ওর নাম শুনেই মিহির যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে।তবুও ও মীরার মুখ থেকে শুনতে চায় ও কি বলেছে।
,
চুপ করে থাকিসনা বল মিহু তোকে কি বলেছে।
,
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মীরা বললো,,,,,মিহু দির দোষ নেই দাদাভাই,,,ও যেটা বলেছে একদম সঠিক কথাই বলেছে। আমি নিজেই এই সম্পর্কটাকে মানিনা তাহলে কোন মুখে আমি তোমাদের থেকে হেল্পার আশা রাখি।তাইতো মিহুদির কোনো দোষ নেই।আমি তো নিজেই বলেছি না আমি মিস্টার মৈনাক কে নিজের বাবা হিসেবে মানি আর না ওনার সম্পত্তির ওপর আমার কোনো দাবি আছে।তাহলে আমার তো উচিতই নয় সাহায্য চাওয়ার।
,
ও বললো আর তুইও আমাকে আর জানালিনা।বাহ এই তুই আমাকে দাদাভাই বলিস। কিন্তু আমিতো তোর মতো মুখের সম্পর্ক রাখিনা বোন।আমি তোকে নিজের মন থেকে বোন বলে ভাবি।মিহু যেমন আমার বোন তুইও আমার আরেক বোন।আর এখানে যার অসুস্থতার কথা হচ্ছে তাকে আমি ছোটমা বলে ডাকি।তাহলে তোর কোনো অধিকার নেই একজন ছেলের থেকে তার মায়ের অসুস্থতার খবর গোপন করা।যাইহোক এখন যখন শুনেছি আমি নিজেই যাবো ছোটমায়ের কাছে। ওনার ট্রিটমেন্টে কোনোরকমের কোনো গাফিলতি আমি আর বরদাস্ত করবোনা।
,
সরি দাদাভাই,,,,,,তোকে সবটা খুলে না বলার জন্য।কিন্তু এখনো আমি নিরুপায়।তোর থেকে আমি কোনোরকমের কোনো হেল্প নিতে পারবোনা।
,
মিহির রেগে মীরার কাঁধ ঝাকিয়ে বললো,,,,,,কেন কারণটা কি।আমি তো ছেলে হয়ে ছোটমায়ের জন্য করবো।এখানে ন আমিহু আছে আর না পাপা।
,
হসপিটালে মাকে ভর্তি করাবার পর তোর ছোটমাই যে আমাকে দিব্যি দিয়েছে আমি যেন তোদের থেকে ওনার চিকিৎসার জন্য কোনো টাকার হেল্প না নিই। আমি জানি না আমি কি করবো এখন তবে মায়ের দিব্বির জন্য আমার হাত পা বাঁধা দাদাভাই।ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো মীরা।
,
ওকে এমন ভেঙে পড়তে দেখে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো মিহির। স্নেহের সাথে ওর চোখের জল মুছিয়ে ওর কপালে স্নেহের পরশ দিয়ে বললো,,,,,,,আমি বুঝতে পারছি ছোটমা কেন এমনটা বলেছে।আসলে কি জানিস মানুষ সব সহ্য করতে পারে তবে নিজের সেলফ রেস্পেক্টে যখন আঘাত আসে তখন মানুষ বোধহয় নিজের জীবনের থেকেও নিজের আত্মসন্মানকে বাঁচানোর চেষ্টা করে।ছোটমাও সেটাই করেছে।কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে যা পরিস্থিতি তাতে তুই কিভাবে সবটা সামলাবি।
,
মিহিরে বুকে মাথা রেখেই বললো,,,,,,জানিনা দাদাভাই,,,আমি কিচ্ছু জানিনা।কিন্তু এটা জানি মায়ের আমি কিচ্ছু হতে দেবোনা।
,
ঠিক আছে চল আমাদের এখন হসপিটালে যেতে হবে।
,
কিন্তু,,,,,,দাদাভাই।
,
চিন্তা নেই আমি কোনো হেল্প করবোনা শুধুমাত্র মানুষটাকে একবার দেখবো।আর বেশি কিছু ভাবতে হবেনা চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।
,
মীরাও আর কোনো কথা না বলে মিহিরের সাথে গাড়িতে উঠে বসলো।
,
,
আহ্হ্হঃ ড্যাম ইট,,,,,,,ওর সাহস হলো কি করে ওকে টাচ করার।রাগে আক্রোশে গাড়ির সিটেই গুসি মারলো রাজবীর।
,
প্রেসিডেন্ট,,,,,,,,,,
,
গাড়িটা ফলো কর।কোথায় যাচ্ছে আর কি জন্য যাচ্ছে সেটা আমি জানতে চাই।
,
কিন্তু প্রেসিডেন্ট,,,,,,,,,,, এখন আপনার একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে।
,
একটা ভয়ঙ্কর চাহুনি দিয়ে তাকালো রাজবীর।
,
না না ঠিক আছে আমি এক্ষুনি গাড়িটার পিছন নিচ্ছি।
,
,
সিটি হসপিটাল,,,,,,,,,,,,,
*************
ডক্টর,,,,,,,,মা,,,,,আমার মা কেমন আছে? হুড়তে দূরতে ছুটে এসে দাঁড়ালো মীরা ডক্টরের কেবিনে।ওর পিছনে মিহিরও ঢুকলো।
,
ডক্টর কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছনের মানুষটাকে দেখে থমকে গেলো ডক্টর।কিন্তু পিছনের মানুষটা ওকে ইশারায় চুপ করতে বললো।তাই ডক্টর মীরাকে বললো,,,,,,,, শি ইস আউট অফ ডেঞ্জার নাও।
,
কথাটা শুনে মীরার প্রাণে প্রাণ ফিরে এলো যেন।তবুও ও ডাক্তারকে বললো তাহলে হঠাৎ এমনকি হয়েছিল যার জন্য মায়ের এমন অবস্থা হলো।
,
আসলে,,,,,,,ডক্টর একটু ইতস্তত করেই বললো,,,,,,,,আসলে ভিজিটিং আওয়ারে মিস্টার মৈনাক আর ওনার মেয়ে মিহিকা রাজপূত এসেছিলেন ওনার সাথে দেখা করতে।
,
কিহ,,,,,,,,মীরা আর মিহির দুজনেই একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো।
,
উনি নিশ্চই এমন কোনো কথা বলেছেন আমার মাকে যার জন্য আমার মা অসুস্থ হয়ে পরে।মীরা রেগে গিয়ে বললো কথাটা।
,
শান্ত হ মীরু,,,,,দ্যাখ আমরা জানিনা ছোটমাকে পাপা কি বলছে তবে যদি সত্যিই উনি কোনো রকমের খারাপ ব্যবহার করে থাকেন তবে প্রমিস করছি আমি কিন্তু চুপ করে থাকবোনা আর।মিহির বললো।
,
ডক্টর আমি কি আমার মাকে একবার দেখতে যেতে পারি।মীরা অনেকটা আশা নিয়ে বললো।
,
দেখুন ওনাকে এখন ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারানো হয়েছে আপনি বাইরে থেকে দেখতে পারেন।
,
ঠিক আছে ডক্টর।বলেই মীরা বেরোতে যাবে তার আগেই ডক্টর বললেন,,,,,,, মিস মীরা,,,,আপনাকে আগেও বলেছি আর আজকেও বলবো,,,পেসেন্টের কিন্তু ইমিডিয়েটলি অপারেশন করণতা জরুরী।প্লিজ আপনি সেটা একটু তাড়াতাড়ির ব্যবস্থা করুন।
,
মীরা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,,,,,,আমি চেষ্টা করছি ডক্টর। আমাকে প্লিজ আর একটু সময় দিন।
,
,
সিটি হসপিটালের বাইরে ব্ল্যাক জাগুয়ার থেকে রাজবীর যখন বেরোলো তখন ওকে দেখে চেনার কোনো উপায় নেই।তবে ওর অদ্ভুত পোশাক দেখে আসে পাশের অনেক কৌতূহলী দৃষ্টি ওর ওপরেই যে পড়ছে সেটা ও খুব ভালো করে জানে।
,
প্রেসিডেন্ট আমার মনে হয় আপনার ওখানে না যাওয়াই ভালো।কারণটা তো আপনি জানেন।যদি কোনো অচেনা মহিলার স্পর্শও লাগে আপনার তাহলে ,,,,,,,,কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারলোনা ডেভিড।
তার আগেই গম গমে আওয়াজে রাজবীর বললো,,,,,,,ওকে ওই ভাবে ছেড়ে রেখে আমি নিশ্চিন্তে কি করে বসে থাকবো গাড়িতে। ( মেয়েটাকি তবে আমার কথা বিশ্বাস করেনি তখন।আমিতো বললাম আমি প্রটেক্শন নিয়েই ওর সাথে ইন্টিমেন্ট হয়েছি।তাহলে ,,,,,কি জন্য ও হসপিটালে এসেছে।নাকি ওকে ওই মিহির জোর করে নিয়ে এসেছে।তাহলে কি ও সবটা মিহিরকে বলে দিয়েছে।কিন্তু ওতো নিজেই কিছু বলতে বারণ করেছে,,,তাহলে? উফফফ এই মেয়েটা আমাকে একটুও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না তো।কিন্তু আমিও রাজবীর দেখি ও কতদূর কি করতে পারে।)।মনে মনে কথাগুলো বলেই সোজা হসপিটালের ভিতরে ঢুকে যায়।
আর এদিকে ডেভিড রাজবীরকে ভিতরে ঢুকতে দেখে পকেট থেকে ফোন বের করে গার্ডদের এলার্ট করে দিলো।কারণ ও চায়না কোনো কিছুর বিনিময়ে ওদের প্রেসিডেন্টের কোনোরকমের কোনো ক্ষতি হোক।তাহলে যে অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে, তাই কোনো রিস্ক নিতে রাজি নয় ডেভিড।
,
,
---------চলবে ।
Thanks for your feedback