Bondini - Session 1 । Episode - 4 । New Bengali Story 2024
মিহির, মীরার স্নেহময় বড় ভাই, সব সময় ওর পাশে থেকেও কিছু সত্যের মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে রাজবীরের ক্রোধ এবং ঈর্ষা গল্পের নাটকীয়তা বাড়িয়ে তোলে। ভালবাসা, প্রতারণা, এবং পারিবারিক দ্বন্দ্বে পূর্ণ এই গল্পটি পাঠকদের মনকে ছুঁয়ে যাবে।"
বন্দিনী :-- পর্ব :- ৪
,
আচমকা ওর সামনে কারোর গাড়ি থামার আওয়াজে চমকে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো মীরা।ভয়ে বুকে হাত দিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু বলতেই যাবে , তার আগেই ও দেখলো গাড়ির দরজা খুলে ওর দাভাই বেরিয়ে আসছে।
দাভাইইই,,,তুই,, এখানে?
,
মীরার সামনে এসে ওকে সাইড থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,তুই কি রে মীরু,,তখন থেকে তোকে ডেকে যাচ্ছি আর তুই কি না শুনতেই পাসনি।ধ্যান কোথায় আছে তোর।এইভাবে রাস্তায় চললে তো যেকোনো মুহূর্তে একটা এক্সিডেন্ট ঘটে যাবে।
,
এক্সিডেন্ট যা হবার সেটা আগেই ঘটে গেছে রে দাদাভাই,,,,,কিছুটা উদাসীন ভাবেই কথাটা বললো মীরা।
,
হোয়াট,,,এক্সিডেন্ট?,,,,কি হয়েছে মীরু,,,,তোকে এমন টেন্ডস লাগছে কেন?আর কোথায় লেগেছে তোর কিভাবে হলো এক্সিডেন্ট,,,,কিছুটা অস্থির হয়েই মীরার কাঁধে হাত রেখে চিন্তিত হয়ে বললো মিহির।
,
মিহিরের কথাগুলো শুনে এতক্ষনে মীরার যেন হুস ফিরে এলো।ও নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো,,,,আরে চিল ব্রো কিছুই হয়নি আমার । তুই যেভাবে হুট করে সামনে এলি তাই আমি কথাটা বললাম।মীরা নিজের কথাটা ঘোরানোর জন্যই বললো।
,
ভ্রু কুঁচকে মিহির মীরাকে বললো,,,,,,,,,মীরুউউউ,,,,,তুই খুব ভালো করে জানিস আমি মিথ্যে বলা পছন্দ করিনা।তাই কি হয়েছে সেটা আমাকে স্পষ্ট করে বল।
,
মীরা তার এই দাদাকে খুব ভালো মতোই চেনে,আর এটাও জানে মিহিরের কাছে ও কিছু লুকাতে পারবেনা।কারণ মিহির ওর চোখ দেখেই সবকিছু বুঝে যায়।পৃথিবীতে মাত্র দুজনই এমন মানুষ আছে যাদের কাছে মীরার না বলা প্রত্যেকটা কথা তারা ওর চোখ দেখেই বুঝে যায়।কিন্তু মীরা কালকের ঘটনাটা কিছুতেই মিহিরকে বলতে চায়না।কারণ যতই হোক মিহির ওর দাদা।নিজের বোনের অন্যের সাথে রাত কাটানোর ঘটনাটা সে কি ভাবে বলবে তাও নিজের মুখে।নাহ ও কিছুতেই বলতে পারবেনা।তার জন্য যদি ওকে মিথ্যের আশ্রয়ও নিতে হয় তাহলে তাই নেবে।কারণ আজকে সকালেই ও মিস্টার রাজবীর কে নিজেই বলেছে ওদের মধ্যে যা কিছু হয়েছে সেটা যেন কেউ কোনোদিনও না জানতে পারে।তাই ও নিজে থেকে কখনোই এই কথার খেলাপ ও করবেনা।
মুখে জোর পূর্বক একটা হাসি নিয়ে মীরা বলে,,,,,,,আমার জীবনে প্রত্যেকটা ঘটনাই একটা এক্সিডেন্ট তাই না দাদাভাই।
ছোট থেকেই আমি জানতাম আমার বাবা নেই,এমনকি মাকে সিঁদুর পড়তে দেখলেও কখনই ঐ মানুষটাকে নিজের চোখের সামনে দেখিনি।
স্কুলে সবার বাবাকেই যখন দেখতাম তখন স্বভাবতই আমার মনেও কৌতূহল জন্মালো নিজের বাবার সম্বন্ধে জানার।মাকে জিজ্ঞাসা করলেই তার চোখে জল ছাড়া আর কোনো উত্তর আমি পাইনি। ছোট থেকে মা ছাড়া যে আমার কেউ নেই ,তাই ঐ মানুষটার চোখে জল দেখে আমিও আর কোনোদিন আর কোনো প্রশ্নই করিনি।
হঠাৎই একদিন একটা অজানা লোক আমার সামনে এসে আমাকে বললো আমি ওনার মেয়ে আর উনি আমার বাবা। আর উনি এখন ওনার সন্তানকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক কারণ উনি জানতে পেরেছেন ওনার বোন ম্যারো ক্যান্সার হয়েছে।আর ওনার আরও দুজন সন্তানের সাথে ওনার ম্যাচ হয়নি কিন্তু ওনার এতদিনের অবহেলিত অবৈধ সন্তানের সাথে ওনার ম্যাচ হয়েছে।তাই উনি নিজেকে বাঁচাতে যেন তেনো প্রকারেনো এখন নিজের সন্তানকে ফিরে পেতে চান।কিন্তু এখানেও একটা শর্ত দিয়েছেন,,,,উনি শুধুই ওনার সন্তানকে ফিরত পেতে চান ওনার সন্তানের মাকে নয়।
,
মীরার কথাগুলো শুনে মিহিরের লজ্জায় মুখ নিচু হয়ে আসে।কারণ ও তো সব জানে।ওর বাবার এমন কাজে ও নিজেও খুবই লজ্জিত। লুকিয়ে বিয়ে করলেও ওর বাবা কখনোই ছোটমাকে সবার সামনে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেননি আর না করেছেন তাদের সন্তান মীরাকে।
মীরু,,,,,,,, বাবা যেটা করেছে সেটা সত্যি অত্যন্ত জঘন্য একটা কাজ।আমি এর জন্য কোনোদিনও ওই মানুষটাকে ক্ষমা করবোনা।তবে বোন আজকে একটা কথা না বলে পারছিনা,,,,বাবা কিন্তু অনেকটাই বদলে গেছে।জানি ওনার স্বার্থ ছিলো তোকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু মানুষটাকে আমি বদলে যেতে দেখেছি একটু একটু করে।নাহলে ওনার প্রিয় মেয়ের কথা অগ্রায্য করে উনি কিন্তু তোকে তোর প্রাপ্যটা দিয়ে দিয়েছে।
,
মিহিরের কথা শুনে একটা তাছিল্যের হাসি হেসে বললো,,,,,,,,, জানিস দাদাভাই একটা সময় আমাকে মানুষ করতে মাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল,সেই মানুষটাকে নিজের শরীর বিক্রি করার প্রস্তাবও দিয়েছিল কিছু সমাজের মুখোশধারী মানুষেরা।কারণ একজন অসহায় মেয়ের পক্ষে বিনা স্বামীর সাপোর্টে এই সমাজে টিকে থাকাটা যে খুবই কঠিন সেটা সেদিন ওই মানুষটা খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছিলো।আর তাইতো নিজের সবটা হারাবার আগে একবার নিজের বেস্টফ্রেন্ডকে সবটা খুলে বলেছিলো।ভাগ্গিস সেদিন মিমি আমাদের পাশে ছিলো নাহলে বাবার সাথে সাথে মাকেও আমি চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেলতাম।
,
মানে,,,,,,,কি বলছিস তুই।হারিয়ে ফেলার কথা কেনো বললি।
,
কারণ যিনি মাকে ওই রকম কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন সেটা আর কেউ নয় তোদের ম্যানেজার রাঘব সিনহা।আর এতে প্রচ্ছন্ন মদত ছিলো তোর সো কল্ড বাবা মিস্টার মৈনাক রাজপূত।
,
হোয়াটটটটটট,,,,,,,,রাঘব আংকেল ছোটমাকে,,,,,,,বাস্টার্ড।আমি ,,,আমি আজকেই ওই জানোয়ারকে জব থেকে তাড়িয়ে দেব।
,
রিলাক্স ভাই,,,,,,,, উনি তো ঘুঁটি মাত্র আসল মানুষটাই যে এমন করিয়েছে তাহলে সেটার বেলায় কি বলবি।তারচেয়ে এই ভালো দ্যাখ আমি তো জানতামই আমার মা ছাড়া আর কেউ নেই এবং এখনো সেটাই মানি।কারণ আর যাইহোক ওই মানুষটাকে আমি কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারবোনা আর না পারবো বাবা বলে মেনে নিতে।কিন্তু আমি তোকে নিজের দাদাভাই বলে মানি, তাই তোর কাছে একটাই রিকুয়েস্ট ওই মানুষটার হয়ে আমাকে আর কোনোদিন কিছু বলতে আসবিনা।আর রইলো ওনার প্রপার্টি তাহলে আগেও আমি ওনাকে বলেছি আর আজকেও তোকে বলে দিচ্ছি ,,,,,আমি তোদের থেকে একফোঁটা জলও কোনোদিন দাবি করবোনা।
কারণ ওই মানুষটার ছায়াটাকেও আমি ঘৃণা করি তাই ওনার সম্পত্তির ওপর আমার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই।
,
মীরু,,,সোনা বোন আমার এই দাদাটার একটা কথা শোন প্লিজ,,,,,,,মিহির এগিয়ে এসে দুহাত দিয়ে মীরার গালে হাত রেখে বললো।
,
দুই ভাইবোনের কথার মাঝে কিছু দূরেই একটা ব্ল্যাক ল্যাম্বার্গিনী যে অনেক্ষন ধরেই দাঁড়িয়ে আছে সেটা ওরা খেয়ালি করলোনা।
গাড়ির মধ্যে দুটো তীক্ষ্ণ চোখ এই দুজনকে অনেক্ষন ধরেই দেখে যাচ্ছে । এবং মিহিরের এমন ভাবে মীরাকে জড়িয়ে ধরা , ওর গালে হাত দেওয়া সবটাই এই মানুষটার মনকে ভিতর থেকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
,
ডেভিড,,,,,,,,,,,,,,,,শান্ত অথচ রাগী গম্ভীর আওয়াজটা শুনেই ড্রাইভিঙে বসা ডেভিড নড়ে চড়ে উঠলো।
,
প্রেসিডেন্ট,,,,,আমি এক্ষুনি খোঁজ নিচ্ছি ম্যাডামের সাথে মিস্টার রাজপুতের কি সম্পর্ক।
,
ডেভিডের কথায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালে ডেভিড আমতা আমতা স্বরে বললো,,,,,,সরি প্রেসিডেন্ট ম,,,মানে আমি ম্যাডামের সমস্ত ডিটেলস আপনি একঘন্টার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
,
সেটাই তোমার জন্য ভালো হবে,,,,,কথাটা বলে রাজবীর আবার তাকালো সামনের দিকে।
কিন্তু সামনের দৃশ্য দেখে রাজবীরের রাগের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।
,
ডেভিডও সামনের দৃশ্য দেখে মনে মনে একটা শুকনো ঢোক গেলে,,,,,,,,,,হয়ে গেলো,,,,এবার না জানি প্রেসিডেন্ট এই মিস্টার রাজপূতের কি অবস্থাটাই না করবে।
যে মানুষটা মেয়েদের হাত থেকে শত হস্ত দূরে থাকতো ,,আজকে সেই মানুষটাকেই একটা মেয়ের জন্য এমনভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়িতে ওয়েট করতে দেখলাম। সেই মেয়েটা যে নিছক কোনো সাধারণ মেয়ে নয় ওদের প্রেসিডেন্টের জীবনে সেটা ভালো মতোই বুঝতে পারছে ডেভিড।
,
এর সাহস হলো কি করে রাজবীর সিংহানিয়ার ওয়াইফকে টাচ করার।ও জানে এর জন্য ওকে ঠিক কতটা পরিমানে ভুগতে হবে। হুঙ্কার দিয়ে উঠলো রাজবীর।
আর ডেভিড সেতো মনে মনে তার প্রভুকে স্বরণ করে যাচ্ছে।কেনো জানেনা ওর ভয় হচ্ছে এই ঝড় কে এবার কি করে শান্ত করবে ওরা।
,
,
----------------চলবে -----------------
Thanks for your feedback