বেলাশেষ_নাকি_বেলাশুরু
পর্ব - ৩
এই যে ম্যাডাম শুনছেন আরে তখন থেকে ডেকে যাচ্ছি।। বলি কোন খেয়ালে আছেন আপনার টিকিট টা একটু দেখান।।
কানের সামনে ওকে যে কেউ ডাকছে সেদিকে খেয়াল ছিলোনা নন্দিনীর।।তাই একটু আনমনা হয়েই সামনে ফিরে চাইলো সে।।
,
এই যে আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন, আমার কথা।।বলি সঙ্গে কি টিকিট আছে নাকি এমনি এমনিই বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠে বসে পড়লেন।।একটু কড়া ভাবেই বললো যেন কথাটা টিটি ব্যক্তিটি।।
,
কিছুক্ষন হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে রইলো সে,,,আসলে এতক্ষন ও অতীতের একটা ভয়ঙ্কর পার্টে ছিলো, তাই টিটির এই বিদ্রুমাত্মক কথা গুলো ওর মগজ তাই বুঝতে সময় নিচ্ছে।।
,
আচ্ছা জ্বালায় পরা গেলোতো।।শুনুন যদি টিকিট না সঙ্গে থাকে তবে প্লিজ উঠে আসুন।।আমি নেক্সট স্টেশনে আপনাকে নামিয়ে দেব।।।দেখে তো ভদ্র ঘরের মহিলাই লাগছে আপনাকে,,কিন্তু এখন আর কি দেখে কাউকে চেনা যায় বাইরে থেকে।। অত্যন্ত বিশ্রী ভাবেই উনি কথাগুলো বলে গেলেন নন্দিনীকে।।
,
নিজেকে কিছুটা ধাতস্ত করে নন্দিনী নিজের কোলের ব্যাগটা হাতড়ে কিছু একটা বার করার চেষ্টা করছিলো,,,আর তখনই ঐ টিটি ভদ্রলোকটি আবার বলে উঠলেন,,,,,,,,,,,, আপনি একে বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠেছেন আর এখন ব্যাগে টিকিট খোঁজার নাটক করছেন? দেখুন হয় ভালোয় ভালোয় পরের স্টেশনে নেমে যান নইলে মহিলা পুলিশ দিয়ে আপনাকে বিনা টিকিটে ট্রাভেল করার জন্য অ্যারেস্ট করিয়ে দেব।।।আসলে আপনাদের মতো মহিলাদের খুব ভালো করে চেনা আছে।।এইরকম বেশভূষায় থেকে সিম্প্যাথি আদায় করে কিভাবে বিনা খরচে চলে যাওয়া হয়।।।
,
একটানা টিটির এতো কথা শুনে কামরার অনেকেই কৌতূহলে নন্দিনীর দিকের তাকিয়ে আছে।।ওর যেন মনে হচ্ছে কোথাও কি একটু শান্তি নেই।। ঘরে বাইরে এতো অপমান এতো অবহেলা শুধুই কি তারই প্রাপ্ত।। অবশ্যই তারই প্রাপ্তি কারণ তা নাহলে এতদিনের সাজানো সংসার তার সব সম্পর্ক গুলো এইভাবে মিথ্যে হয়ে যেত না।।
কিছুক্ষণ খুঁজেই ব্যাগ থেকে টিকিটটা বার করে টিটির সামনে তুলে ধরলে ভদ্রলোকটি একটু অবাকই হয়। কারণ উনি আশা করেননি এইরকম বেশভূষায় থাকা এই মহিলাটির কাছে আদেও টিকিট আছে কিনা।। তাই কিছুক্ষণ আগে তিনি যে কথাগুলি বলেছিলেন তার জন্য তিনি মনে মনে লজ্জিত ভাব অনুভব করলেন।।
তিনি চেক লিস্টে নাম মিলিয়ে দেখলেন এবং টিকিটটা ফেরত দেওয়ার সময়,, তিনি বললেন,,,আমি বুঝতে পারিনি আপনার কাছে টিকিট ছিল বলে। তাই আমি যেটা বলেছি আপনাকে তার জন্য আই এম সরি।। আসলে আমরা রচিত এই রকম ঘটনার মুখোমুখি হই তাই আমাদের এইরকম ভাবেই বলতে হয় বুঝতেই পারছেন আমরাও চাকরি করি আমাদেরও জবাব দিতে হয়।।
,
নন্দিনী ওনার কথায় হালকা হেসে বললেন আপনার ভুল নেই,, এবং এই কামরায় প্রত্যেকটা ব্যক্তিরই আমাকে ভুল বোঝাটাই স্বাভাবিক।। আসলে এখনকার মানুষরা বাইরের চাকচিক্যতেই বেশি প্রাধান্য দেয়। ভেতরের মানুষটাকে তারা কতটা বোঝে, কতটা চেনে ,তাই আপনি ক্ষমা চাইবেন না।। এটা আপনার ডিউটি ছিল তাই আপনি আপনার ডিউটি পালন করেছেন।। আমি কিছু মনে করিনি।।
আর কোন কথা না বলি নন্দিনী বাইরে জানলা দিতে মন দেয়।। আসলে তার কাউকেই কোনো জবাবদিহি দিতে বা শুনতে ইচ্ছে করছে না।।
,
ট্রেনের গতিবেগের সাথে নন্দিনীর মনের গতিবেগও পাল্লা দিয়ে ছুটে চলেছে অতীতের দিকে।।
,
নন্দু, ওর মা নটা বেজে গেল,, আজকে তোর অফিসের প্রথম দিন না, আজকেই তুই লেট করবি।।
,
মায়ের মুখে নটা বেজে গেল শুনেই নন্দিনীর ঘুম উড়ে গেল।। ইশসস,, মা তুমি আমাকে আগে ডাকোনি কেন,, আজকে ফার্স্ট ডে তেই মনে হয় আমি লেট হয়ে যাব।।
,
কিছু লেট হবে না তুই যা তাড়াতাড়ি রেডি হও আমি এদিকে খাবার বাড়ছি। সুনন্দা দেবী বেরিয়ে গেলে নন্দিনী ও তাড়াতাড়ি উঠে বাথরুমে চলে যায়।।
,
একটা নীল সাদা সালোয়ার পড়ে রেডি হয়ে আসে নন্দিনী।। সদ্য স্নান করা নন্দিনীকে খুব স্নিগ্ধ লাগে এই সাজে।। ও বরাবরই খুব কম সাজে, আজকেও তাই করেছে।। একটা সিম্পল সালোয়ার, সাথে কপালে ছোট্ট কালো টিপ,, চোখে গাঢ় করে একটু কাজল ও হালকা লিপ বাম।।
,
নন্দিনীকে নেমে আসতে দেখে ওর ঠাম্মি ওকে বলল,,, তা মহারানী অফিসে কি এতটাই সেজেগুজে যেতে হয়,, নাকি তোমাকে আলাদা করে বলেছে সেজেগুজে থাকতে।। অফিসে কি আদেও কাজ করতে যাচ্ছ নাকি ওখানে কোন ছেলে ধরার ফাঁদ দিতে যাচ্ছে।।
,
সকাল বেলায় ঠাম্মির মুখে এইসব কথা শুনে নন্দিনীর চোখে জল চলে আসে,,তবুও ও সেটাকে সামলে বলে,,,,,,,কই ঠাম্মি আমি তো রোজ যেমন কলেজে যাবার জন্য তৈরি হতাম ,,আজকেও তেমন হয়েছি।।
,
ওর ঠাম্মি ওর কথায় মুখ বেকিয়ে বললো,,,, গাছে উঠতে না উঠতেই এক কাঁদি,, বলি ক টাকা রোজগার করবি যে আমার মুখে মুখে কথা বলছিস।। এখনো তো একদিনও হলো না তার মধ্যে এত ডানা গজিয়ে গেল।।
,
সুনন্দা দেবী দেখলেন আজকে উনার সাথে তর্ক করলে মেয়ের চাকরিতে যাওয়ায় দেরি হয়ে যাবে।। কারণ উনি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলেন যে ননীবালা দেবী ইচ্ছা করেই নন্দিনীকে লেট করাচ্ছে।। তাই তিনি মেয়েকে উদ্ধার করতে একটু জোরে ডাকলেন,,,, নন্দু, আয় মা খেতে আয়।। আমি সব রেডি করে দিয়েছি তুই এসে খেতে বস।,
মায়ের ডাক শুনে নন্দিনী মেঝেতে খেতে বসলো।। প্রথম দিন অফিসে যাচ্ছে তাই বেশি কিছু আয়োজন করেননি।। সামান্য ভাত ডাল একটু আলু ভাজা, আরেকটু মাছ ভাজা।।
,
মাছের টুকরো দেখে নন্দিনী মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেল কারণ নন্দিনী যে মাছ খেতে খুব ভালবাসে।। তার মাঝে তাকে আজকে মাছ ভেজে দেবে সেটা আশা করেনি।।
মেয়ের মুখটা উচল দেখে মায়েরও মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।। আসলে ওরা তো মধ্যবিত্ত বাড়ির মানুষ। তাই রোজের মাছ আনা সম্ভব নয় ওদের পক্ষে।। নন্দিনী ও সেটা বোঝে তাই ও কোন রকমের বায়না ওর মা বাবার কাছে করেনা।। ছোট থেকেই নন্দিনী দেখে এসেছে ওর মা বাবা ওর জন্য কতটা কষ্ট করে, ঠাম্মির বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে ভালো পড়াশোনা ও ভালোভাবে রাখার চেষ্টা করে গেছে।। তাই আলাদাভাবে বাবার ওপরও এইসব আবদার চাপিয়ে দেয় না।।
,
খাওয়ার পর ওর মা ওকে হাতে একটা টিফিন বক্স দিয়ে বলল সময় পেলে টিফিনটা করে নিস মা।। নন্দিনী টিফিন টা নিয়ে মাকে প্রণাম করল ও ঠাম্মির কাছে গিয়ে তাকে প্রণাম করে বলল আসছি ঠাম্মি ।।
,
ননী বেলা দিবি, আশীর্বাদ তো দূরে থাক মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলেন।। নন্দিনী একবার মায়ের দিকে তাকালে, তিনি চোখ বুজে আশ্বস্ত করলেন যে বেরিয়ে যেতে।।
,
নন্দিনী বেরিয়ে যাবার পর ওর মা দুগ্গা দুগ্গা বলে,ঘরে ঢুকতেই শুনতে পেলেন শাশুড়ি মা বলছে,,, আমি এখনো বলছি বৌমা, এই মেয়েকে চাকরি করতে দিও না এই মেয়ে মুখ কালো করে আসবে।।
,
শাশুড়ির বাক্যবানে জর্জরিত হয়ে শুধু এইটুকুনি কথা বলতে পারলেন সুনন্দা দেবী,,,,,,, মােয়েটা তো আপনাকে অনেক ভালোবাসে,, আপনি আশীর্বাদ না দিতে পারেন অভিশাপ দেবেন না দয়া করে।। আর যাই হোক ও তো আপনাদের বংশেরই মেয়ে।। আপনারই তো নাতনি হয়।।
,
সুনন্দা দেবীর কথা শুনে উনার শাশুড়ি জ্বলে উঠলেন, উনি বললেন,,, শোনো বৌমা, দিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছি,, এমনি এমনি এই চুলটা সাদা হয়নি।। তাই ভালোর জন্যই তোমাকে বললাম যে মেয়েকে চাকরি করতে না দিয়ে তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে।। এখনকার যা যুগ পড়েছে যদি উঁচ নিচ কিছু হয়ে যায় তখন সামলাতে পারবে তো।। আমি তোমাকে স্পষ্ট বলে রাখলাম বৌমা আমি কিন্তু কোন অন্যায় মেনে নেব না।।
,
সুনন্দা দেবী উনার শাশুড়িকে বললেন,,, সেই সময় কোনদিনই আসবেনা মা আমি আমার মেয়েকে বিশ্বাস করি।।
,
আমার শাশুড়ি আর কিছু না বলে, গট গট করে নিজের ঘরে চলে গেলেন।।।
,
সেন গ্রূপ অফ কোম্পানি কলকাতা শহরের একটা অন্যতম নাম।।এখানে যে চাকরি পেয়েছে সেটাই অনেক ।।। একটা জোরে নিঃস্বাস নিয়ে নন্দিনী পা রাখলো তার নতুন চাকরি জীবনে।।
প্রথমদিন ম্যানেজার বাবুর থেকে সব কিছু বুঝে নিতে নিতেই ওর লাঞ্চ আওয়ার পেরিয়ে গেলো।।টাই আসা থেকে ওর আর কারোর সাথেই তেমন ভাবে আলাপ পরিচয় করা হয়নি।।তাছাড়া এখানের সব ব্যাপারই একটু আলাদা।।খুব আধুনিক সাজসজ্জা অফিসের,,সাথে যারা কাজ করছে তারাও নিজেদের যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছ।।তাই নিজেকেই বড্ডো বেমানান লাগছে ওর ।।আসলে নন্দিনী কোনোদিনই সাজগোজ করতে পছন্দ করেনা।।ওর কাছে মানুষের বাহ্যিক সাজসজ্জার থেকে ভিতরের খাঁটি মনটার দাম বেশি ছিলো।।কিন্তু আজকালকার যুগে এইরকম ভাবনাকে বস্থাপচাই মনে করে।।
,
হাই,,,,,,,,, একটা মেয়ের গলার আওয়াজ পেয়ে ও সামনে দেখে ,ওরই বয়সী একটা মেয়ে ওর সামনে এসে হেসে তাকিয়ে আছে।।
,
নন্দিনীও বললো,,,হ্যালো,
আমি প্রিয়া,,,প্রিয়া জৈন।। ফাইনেন্স ডিপার্টমেন্ট।।তোমার কি নাম।।
,
আমি নন্দিনী।। নন্দিনী বসু রয়।।। আমি রিসেপশনিস্ট।।
,
নাইস টু মিট ইউ নন্দিনী।। আজকে থেকে আমরা বন্ধু হলাম কেমন।।তাই তুমি নয় তুই করেই বলবো।।
,
হালকা হেসে নন্দিনীও প্রিয়ার কথায় সায় দিলো।।কারণ এতবড়ো কোম্পানিতে যে তার সাথে যেচে বন্ধুত্ব করতে এসেছে ,,এতেই ও অবাক হয়েছে।।
,
তাহলে চল ক্যান্টিনে,,কিছু খেয়ে আসি।।খুব খিদে পেয়েছে আমার।।
,
ক্যান্টিনে যাবার কথা শুনে নন্দিনী একটু ইতস্তত করে,,,কারণ ও তো বাড়ি থেকেই খাবার এনেছে ,,,আর তার ওপর সেটা ও প্রিয়াকে বলতেও পারছেনা।।
,
নন্দিনীর ইতস্ততা দেখে প্রিয়া একটু হেসে বলল,,, কিরে তোর কি যাওয়ার ইচ্ছা নেই তাহলে বল আমি একাই চলে যাব।।
,
আরে না না আসলে আমি না বাইরের খাবার ঠিক পছন্দ করি না। তাই মা আমাকে টিফিন করে পাঠিয়ে দিয়েছে।। তুমি কি আমার সাথে আমার টিফিন ভাব করে খাবে।। যদি না তোমার কোন প্রবলেম হয়।।
,
আরে বাহ এতে প্রবলেমের কি আছে? জানিস তো আমি না একাই থাকি।। আমার আদি বাড়ি বিহারে।। তাই বাড়ির খাবার খুব মিস করি।। ভালোই হয়েছে আমি এবার থেকে তোর কাছে খাব।। কিরে তোর আপত্তি নেই তো।।
,
নন্দিনী হেসে বল একদমই নেই।। বরং খুব খুশিই হবো।।
,
তাহলে চল,,ওখানে গিয়েই একটু কফির সাথে কাকিমার বানানো খাবারও টেস্ট করেনি।।প্রিয়ার প্রথমদিনই এমন অমায়িক ব্যবহার পেয়ে নন্দিনীর মন ভরে গেলো।।তাই আর ও কোনো আপত্তি না করে প্রিয়ার সাথে টিফিন নিয়ে চলে গেলো।।
,
শিয়ালদাহ স্টেশনে ট্রেন যখন থামলো তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে।।কিন্তু এখানে সেটা দেখে কেউ বলতে পারবেনা।।অগণিত লোক সারাদিনরাতই যাতায়াত করছে একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।।ঠিক যেমন ও আজকে এসে দাঁড়িয়েছে।। কখনো ভাবেনি এমন দিনও ওকে দেখতে হবে।।
ক্লান্ত শরীরটাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে আস্তে আস্তে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে নন্দিনী।।চারদিকে অনেকেই ওকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে দেখছে,,ভাবছে হয়তো পাগলী আর নয়তো চোর।।কিন্তু নন্দিনীর কোনো হেলদোল নেই তাতে।।যেখানে নিজের স্বামীই তাকে চোর বলতে মুখে আটকায়না সেখানে অন্যেরা কি ভাবলো তাতে মাথা ঘামাবার একফোঁটাও শক্তি বা ইচ্ছে কোনোটাই তার শরীরে অবশিষ্ট নেই।।
,
কিছুটা হাঁটার পর একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলো সে।।মাথাটা বড্ডো ঘুরছে,,চোখটাও সামান্য ঝাপসা।।কিছুক্ষন মাথা হেলিয়ে বসে থাকে ও।।। বন্ধ চোখের কোল জুড়ে তখন জলের ধারা বইছে।।।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, বলিহারি মানুষ বটে তোমার ঐ বর।।শরীরে কি একটুও মায়া দয়া নেই গো।।কি এমন করেছো তুমি যে এই ভাবে তোমার ডানহাতটা পুড়িয়ে দিলো।।।অত করে বারণ করলাম ,,পায়ে ধরলাম তবুও তার মন গললোনা।।কি করে করলো গো বৌমনি তুমি তো ওর বিয়ে করা বৌ।।
নন্দিনীর হাতটা নিয়ে বরফ জলে চুবিয়ে ধরে রাখলো মিতা।।
ছোটমুখে বড়ো কথা বলছি বৌমনি,,,,আমরা ছোটোলোক হতে পারি তবে এতটাও পাষান নই।।আমার বরটা আর যাইহোক এমন অমানুষ নয়কো।।সারাটাদিন লোকের বাড়ি খেটে খাই আমরা,,তবুও দিন শেষে জানি ঘরে একজন অপেক্ষা করছে আমার জন্য।। ভালোমন্দ না জুটলেও বরের ভালোবাসায় পেট ভরে যায় আমার।।
সত্যি বলছি বৌমনি তোমাকে দেখলে এখন ভাবি,,,ভাগ্গিশ আমার বরের তোমার স্বামীর মতো টাকা বা রূপ নেই।।থাকলে হয়তো আজকে তোমার মতোই আমাকেও জ্বলতে হত।।
,
কাজের মেয়ের মুখে এই কথাগুলো শুনে নন্দিনীর নিজেকে বড্ড বেশি অভাগী মনে হলো।।ওর সংসারে হয়তো খাবার,পড়ার অভাব নেই কিন্তু একটু ভালোবাসার,,একটু সম্মানের বড্ডো অভাব।।
,
অভিরাজ যখন গ্যাসের মধ্যে ওর হাতটা চেপে ধরেছিলো তখন ও সত্যি সত্যি আশ্চর্য্য হয়ে গেছিলো।।কারণ মানুষ যে এতটাও নির্মম হতে পারে তাও এতো সামান্য কারণে ,,সেটা ও বুঝতে পারেনি।।আজকে মিতা যদি গাসটা বন্ধ না করে দিত ঠিক সময়ে,, তা নাহলে এই হাতটাই হয়তো ওর অকেজো হয়ে যেতো সারাজীবনের মতো।।
,
আর চোখের জল ফেলে কি করবে বল,,,,তোমার মা বাবার উচিত ছিলো বিয়ের আগে সব ভালো করে খোঁজ নেওয়ার।।ভালো দেখতে ভালো চাকরি করলেই যে সে ভালো মানুষ হয়ে যায় এমন তো কোনো কথা নেই।।তোমাকে ওরা জলে ফেলে দিয়েছে গো।।।
আমি জানিনা আমার আর এই বাড়িতে কাজ থাকবে কি না।।তবে সত্যি বলছি বৌমনি তোমার জন্য আমার খুব চিন্তা হয়।।তুমি মানুষটা যে বড্ডো সরল,,বড্ডো ভালো।।তোমার এই ভালোমানুষিটা যে তোমার বর বা তোমার ছেলে যে দেবে না।।।
,
মিতার কথা শুনে নন্দিনীর চোখ দিয়ে আবার জল পড়তে লাগলো।।ও বললো,,,,,,ভাবিসনা মিতু,,,এরা আর যাইহোক আমাকে মারবেনা।।আমিই মনে হয় কিছু পাপ করেছিলাম জানিস আগের জন্মে,,,তাই তো আমি কাউকেই সুখী করতে পারলামনা।।না চাকরি করে বাবা মাকে,,,আর না বিয়ে করে নিজের স্বামীকে।।।
তুমি চুপ করোতো বৌমনি।।তোমার মতো লক্ষী বৌ একটাও আমাকে দেখাও তো।।সেই কোন ভোর বেলায় ওঠো তুমি,,,সবার পছন্দের জলখাবার, টিফিন,দুপুরে কি খাবে তারপর রাতে কি হবে সব কিছু একা হাতেই করো তুমি।।আমি তো জানি আমি নাম মাত্র সাহায্য করি।।তুমিই বরং আমাকে বসিয়ে বসিয়ে এটা সেটা খাইয়ে যাও।।
তোমাকে যে চিনতে পারেনি সে সত্যিই অভাগা গো।।করুনা হয় গো তোমার বর ও ছেলের জন্য।।।
,
কাঁধে একটা স্পর্শ পেয়ে চোখ মেললো নন্দিনী,,,,,,কে?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
Thanks for your feedback