ট্রেনের হুইসেলে নন্দিনী বাস্তবে ফেরে,,,অনেকটা বেলা হয়ে গেছে। ট্রেনের কামরার অনেক যাত্রীরই তখন মধান্য ভোজ শেষ।।কিন্তু নন্দিনীরই একমাত্র বোধহয় ক্ষিদে অনুভব হয়নি।।আসলে মানুষ যখন একমাত্র নিজের লোকের দাঁড়া প্রতারিত হয় তখন মনে হয় সব অনুভূতিরই মৃত্যু হয়।।
মাঝে একবার এক যাত্রী ওর দিকে একটা জলের বোতল তুলে ধরেছিলো।কিন্তু নন্দিনী সেটা নিতে পারেনি,,কারণ কিছুটা অবাক হয়েই সামনের লোকটার দিকে সে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলো, লোকটি কেনো তাকে যেচে উপকার করতে এসেছে।।
পরিস্থিতি নন্দিনীকে আজ এমন জায়গায় এনে দার করিয়েছে যে ,এখন সে নিজের ছায়া টুকু দেখলেও বিশ্বাস করতে পারেনা।।
লোকটি বোধহয় ওর মনের কথা বুঝতে পেরেছিল, তাই আর ওকে বিরক্ত না করে নিজের জায়গায় ফিরে যায়।।
শুন্য দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে একের পর এক হিসেব মেলাতে থাকে নন্দিনী,,,,,,,ঠিক কোথায় ওর ফাঁকটা রয়ে গেছিলো।।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, মা,,,,ও মাআআ কোথায় গেলে? তাড়াতাড়ি আসো একটা সুখবর আছে।।বাড়ি ঢুকতে ঢুকতে বললো নন্দিনী।।
,
মেয়ের এতো জোরে গলার আওয়াজ পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সুনন্দা দেবী রান্নাঘরের কাজ ফেলে রেখে বাইরে বের হয়ে এলেন।।
,
আআ মোলো যা বলি কেউ কি মারা গেছে নাকি তুই কোনো লটারি পেয়েছিস যে এই ভাবে বাড়ি মাথায় করছিস চেঁচিয়ে।। ননিবালা দেবী বললেন।।
,
নন্দিনী ওনার সামনে এসে ওনাকে প্রণাম করে বলে,,,,, কেউ মারা যায়নি ঠাম্মি,,,কিন্তু আমি বলতে পারো লটারি পেয়েছি।।
,
ওর কথায় সুনন্দা দেবী পিছন থেকে বলেন,,,,,,, কি হয়েছে নন্দু কি পেয়েছিস?
,
নন্দিনী মাকে জড়িয়ে ধরে বলে মা ,,,,মা আমি একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেছিলাম আজকে।।আর তাতে আমি সিলেক্ট হয়ে গেছি মা।।কাল থেকে আমি অফিসে বেরোব বাবার মতোই।।
,
মেয়ে নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে সেটা শুনে সুনন্দা দেবীর চোখে জল চলে আসে।।ভগবান মনে হয় এতদিনে ওনার কষ্টের দাম দিয়েছেন।।উনি খুশি হয়ে মেয়ের কপালে স্নেহের একটা পরশ দিয়ে বললেন,,, আমি জানতাম আমার নন্দু একদিন না একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবেই।।আমার আর কিছু চাওয়ার নেই ঠাকুরের কাছে।।তিনি আমার প্রার্থনা শুনেছেন।।আমি এতেই খুব খুশি।।
,
মা ও মেয়ের কথা শুনে ননিবালা দেবী মুখ বাকিয়ে বললেন,,,,,,,, ঢং দেখে আর বাঁচিনা,,,তবুও জানতাম যদি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কোনো বড়ো জায়গায় কাজ পেয়েছে।।ঐ তো ছিড়ির পড়াশোনা পাতি গ্রাজুয়েশন করে পাস করেছিস।।যদি জানতাম রাজা দাদুভাইয়ের মতো ভালো নম্বর পেয়ে পাস করেছিস তবুও একটা কথা থাকতো।।তা না উনি কি না কি ছাতার মাথা একটা কাজ পেয়েছেন আর সেটা নিয়ে ওনার মাও মেয়ের সাথে তাল মেলাচ্ছেন।।বলি বৌমা তোমার কি এই বয়সে এসেও কোনো আক্কেল হবেনা গো,,, মিটা যে এই বছর একুশ ছেড়ে বাইশে পরলো,, বলি এই ধিঙ্গি মেয়েকে আর কত বছর বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে ঘাড়ে।।
,
ঠাম্মির কথা শুনে নন্দিনীর চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো।।ও জানতো বরাবরের মতোই এবারেও তার ঠাম্মি তার কাকার ছেলের সাথে ওর তুলনা করবে।।কিন্তু তাকে যে আজকে খাওয়ার খোটা দেবে সেটা ভাবেনি।।।
,
দরজায় দাঁড়িয়ে এইসব কিছুই শুনতে পাচ্ছিলো পলাশবাবু উনি ওনার মায়ের কাছে এসে বললেন,,,, মা আজকে তোমাকে একটা কথা না বলে পারছিনা,,,,,,,,,আমার মেয়ে যেমনি হোক আর যে চাকরিই পাক না কেনো সেটা সে তার নিজের চেষ্টাতেই পেয়েছে।।আমি বা আমার কোনো পরিচিতই কিন্তু ওকে এই ব্যাপারে কোনোরকম সাহায্য করিনি।।তাই ওর এই সাফল্যে একজন পিতা হিসেবে নিজেরই খুব গর্ব হচ্ছে।।
আর একটা কথা মা,,,,আমার মেয়ে কিন্তু আমার বোঝা নয় ও আমার অহংকার।।আর তাই ওর কবে বিয়ে হবে না হবে সেটাও নাহয় ঐ ঠিক করুক।।আপাতত মন দিয়ে নিজের নতুন চাকরিটা করুক।।কারণ এখনকার দিনে প্রত্যেক মেয়েরই উচিত নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।।আমার এখন আফসোস হয় যদি এখনকার মতো একটু সাহস দেখিয়ে তোমার মুখের ওপর বলতে পারতাম,,তবে হয়তো আজকে সুনন্দা ঐ স্কুলের বাচ্ছাদের হাতের কাজ শেখানোর কাজ টাকে ছাড়তে হতোনা।।কিন্তু তখন ভুল করেছিলাম বলেই যে এখনও ভুল করবো সেটা ভেবোনা।।
,
মেয়ে ও বৌয়ের সামনে ছেলে যে ওনার সাথে এরূপ ভাবে কথা বলবে সেটা ভাবতে পারেননি ননিবালা দেবী।।তিনি রেগে ফোঁস করে ওঠেন।।ছেলেকে বলেন,,,,,,,,,* খুব যে দেখছি মেয়ে ও বৌয়ের হয়ে কথা বলছিস।। তা কি এমন বুলি শেখাচ্ছে তোর বৌ যে একেবারে ওর আঁচলে বাধা হয়ে গিয়ে নিজের মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করছিস।। ভারি যে বৌ বৌ করে মাথায় তুলছিস,সেই বৌ যে তোকে পরজন্মে যাবার জন্য একটা ছেলেও দিতে পারলোনা।।তুই তারই হয়ে এতো সাফাই গাইছিস যে।।
,
মা,,,,,, এখনকার যুগে ছেলে বা মেয়ে বলে কিছু হয়না।।সবাই সমান।।একটা মেয়েকে ঠিক ভাবে মানুষ করতে পারলে সে 10 টা ছেলের থেকেও বেশি কাজ করতে পারবে।।তবে তোমায় এইসব বোঝানো মানে খড়ের গাদায় সুঁচ খোঁজার মতোই অবস্থা হবে।। তার থেকে আমি বলি কি,,তুমি তোমার মন্দির , গুরুদেব আর তোমার দাদুভাইকেই নিয়ে থাকো।।আমি বরং আমার মেয়ে আর বৌকে দেখি,,,,,কেমন।।
,
নন্দিনী আর সুনন্দা দেবীর মুখগুলো দেখার মতো ছিলো।।কারণ আজ পর্যন্ত্য না নন্দিনী তার বাপিকে আর নাই সুনন্দা দেবী ওনার স্বামীকে নিজের মায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলতে শুনেছে।।সবসময় উনি যা বলতো সেটাই মেনে আসা হয়েছে।।আর তাই আজকে উল্টোপুরান হতেই ওদের যেন বিশ্বাসী করতে অসুবিধা হচ্ছে।।
,
ছেলের থেকে এমন কটু কথা শুনে ননিবালা দেবী ঝাঁজিয়ে বললেন,,,,,,,,আচ্ছা আমিও দেখে নেবো তোর মেয়ে চাকরি করে কত্ত বড়োলোক হয়।।আর যেদিনকে কিছু অঘটন ঘটাবে সেদিনকে এই মায়ের কথাই মনে পড়বে তোর।।তখন বুঝবি কেনো তোর মা তোর মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছিলো।।
,
মায়ের মুখে এইসব কথা শুনে পলাশবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।।কারণ তিনি জানেন যে তার মাকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই ,,,,,তাই তিনি নন্দিনীকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলেন।।
,
কিন্তু এদিকে সুনন্দা দেবী পরলেন চিন্তায়,,,কারণ তার শাশুড়িমা উঠতে বসতে তার মেয়েকে অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছেন।।আজকেও এতো ভালো খবর শোনার পরোও তার মেয়ের ভাগ্যে আশীর্বাদের বদলে অভিশাপ জুটলো।।তাই মায়ের মন স্বাভাবিকভাবেই খুবই অস্থির হয়ে রইলো।।মনে মনে তিনি ঠাকুরকে ডাকলেন,,,,,,,,,হে ঠাকুর,,,,,আজকে মেয়েটা খুব খুশি।।তুমিজ দেখো ঠাকুর আজকের ওর ঠাম্মির কোনো কথার প্রভাব ওর গায়ে না লাগে।।
,
নন্দু ,,,,তুই কোন কোম্পানিতে জব পেয়েছিস? বললেন পলাশবাবু।।
,
বাপি আমি সেন গ্রূপ অফ কোম্পানিতে আস আ রিসেপসানিস্টের জব পেয়েছি।।আর হ্যা যদি আমার কাজ ওনাদের ভালো লাগে তবে আমায় অন্য কোনো ডিপার্টমেন্টেও সিফ্ট করিয়ে দিতে পারে।।
,
বাহ তাহলে তো খুবই ভালো।।আর সেন গ্রূপ খুব বড়ো কোম্পানি তাই মা আমি এটাই বলবো ,,সবাই সুযোগ পায়না ,তুমি পেয়েছো তাই অন্য কোনো দিকে মন না দিয়ে নিজের কাজের দিকেই ফোকাস করবে।।কারো তুমি হয়তো চাইবেনা ভবিষ্যতে তোমার বাবা যে তোমার ঠাম্মির বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে কাজে যাবার অনুমতি দিয়েছে সেটায় কোনো রকম দাগ লাগুক।।
,
নন্দিনী বাবার কোলে মাথা রেখে বললো,,,,,আমি প্রমিস করছি বাপি আমি তোমার সব কোথায় শুনবো,,এমন কোনো কাজ করবোনা যেটাতে তোমাদের মানসন্মান নষ্ট হয়ে যায়।।।আর যদি কোনোদিন এমন হয় তবে ঠাম্মি যা বলবে আমি তাই করবো।।প্রমিস।।।
,
নিজের মেয়ের কথা শুনে সুনন্দা দেবী ও পলাশবাবু খুশি হলেন।।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,হকারদের ডাকে আবার ধ্যানচুত হয় নন্দিনী।।গলাটা বড্ডো শুকনো লাগছে,,,,আর মাথাটাও কেমন যেন টলছে।।।
মাথা না টলার কিছুই নেই,,কারণ কাল থেকে এখনও পর্যন্ত ও মুখে কিছু খাবার তো দূরে থাক জল অব্দি দাঁতে কাটেনি।।
তাই ট্রেনের কামরায় এক হকারের থেকে একটা জলের বোতল কিনে কিছুটা জল গলায় ঢাললো নন্দিনী।।
আজকে প্রায় ডেরদিনের মতো সে বাড়ি থেকে দূরে।।কি খাচ্ছে ,, কোথায় থাকছে,,কোথাই বা যাচ্ছে সেটার জন্য কারোরই কোনো মাথা ব্যথা নেই।।কারণ ওর স্বামী বা ওর সন্তানের কাছে ওর বেঁচে থাকা বা না থাকা দুটোই সমান।।
আবারও চোখ দিয়ে তার জল গড়িয়ে পরলো এইসব ভেবে।।
ওর আজও মনে আছে ওর মা একদিনের জন্যও কোনোদিন ওকে না খাইয়ে অফিসে পাঠাতোনা।। সাথে যত কষ্টই হোক টিফিনও করে দিত।।কারণ সুনন্দা দেবী জানতেন তার মেয়ে অন্য মেয়েদের মতো বাইরে খাবার খেয়ে পয়সা নষ্ট করার নয়।।খালি পেটে থাকবে তবুও ও বাইরের খাবার খাবেনা।।
নন্দিনী ভাবে ,,,,,,,,সেও তো ওর মায়েরই মতো সবাইকে তার পছন্দের খাবার বানিয়ে দিত।।সোম যখন বলতো আজকে আমার ফ্রেন্ড রা তোমার হাতের চিলি চিকেন খেতে বা পিৎজা খেতে চেয়েছে,,তখন খুশি হয়েই ওদের সব আবদার ও মিটিয়েছে।বদলে কিছুই চায়নি সে।।তারপরেও যখন সোমকে বলতে শুনলো,,তার মা এই যে এইসব রান্না করে খাওয়ায় তাই তার মা অন্যান্য মায়েদের মতো নয় ,,,,মিডিলক্লাস রাঁধুনি মায়েদের মতো।।
আর যখন ওর বর অভিরাজ যে বার ওর প্রমোষণের জন্য বাড়িতেই একটা পার্টি রেখেছিলো,,,আর নন্দিনী সব গেস্টদের জন্য নিজে হাতে সব খাবার বানিয়েছিল।।
সকলেই যখন খাবারের প্রশংসা করে জানতে চায়,এটা কোন হোটেল থেকে আনা,,,স্বাভাবিক ভাবেই অভিরাজ কিছু বলতে পারেনি।।কিন্তু বাড়ির কাজের মেয়ে মিতা সেদিন সবাইকে বলেছিলো,,,,এইসব রান্না আমাদের বৌমনি নিজের হাতে করেছে।।
সেদিন সবাই নন্দিনীর রান্নার ও তার হাতের কাজের প্রশংসাও পায়।। খুব খুশি হয় নন্দিনী,,,,তাই ও সবাইকে জানায় এইসব রান্না ও তার মায়ের থেকেই শিখেছে।।।
অনেকেই বলে অভিরাজকে যে ভাগ্য করে এমন বৌ পেয়েছো তুমি,,,নাহলে আজকালকার দিনের মেয়েরা এক গ্লাস জল গড়িয়েই খেতে পারেনা ,,সেখানে অন্যকে কি রান্না করে খাওয়াবে।।।
,
কিন্তু নন্দিনী তখনও জানতোনা এই যে সবার এতো এতো ভালো কথা,,এতো প্রশংসা ও পাচ্ছে সেটা যে কিছুক্ষন পরেই অপমানে বদলে যাবে ,,সেটা সে কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি।।।
,
সকল গেস্টরা চলে যাবার পর নন্দিনী আর কাজের মেয়ে মিতা সব কিছু পরিষ্কার করছিলো,,,তখন অভিরাজ ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো।।।
,
কিছু লাগবে তোমার অভি? স্বাভাবিক ভাবেই নন্দিনী জিজ্ঞাসা করে।।
,
অভিরাজ নিজের পকেট থেকে 1000 টাকা বার করে কাজের মেয়ে মিতা কে বললো,,,,,,তুই এই টাকাটা রাখ,,,আজকে হঠাৎই সব কিছুর ব্যবস্থা হয়েছে তাই তুই তো আর অন্য জায়গায় কাজ করতে যেতে পারিসনি,,তাই সেটারই দাম টা দিয়ে দিলাম।।
,
মিতা বলে,,,,,না না দাদাবাবু আমার লাগবেনে গো কোনো টাকা।।আমি তো বৌমনিকে সাহায্য করার জন্যই ছিলাম।।আর তাছাড়া সবই তো বৌমনিই করেছে আমি আর কি করলাম।।ও টাকা তুমি রেখে দাও গো দাদাবাবু,,,আমার লাগবেনে।।
,
ও মা মিতু দাদাবাবু যখন খুশি হয়ে তোকে টাকাটা দিচ্ছে তখন কেনো নিবিনা।।আর তুই কেনো বলছিস যে তুই কিছুই করিসনি।।এতো গুলো লোকের রান্নার যোগার করাটাও কি কম খাটুনির।।তাই সবসময় নিজের পরিশ্রমের জন্য উপার্জন নিতে লজ্জা পাবিনা।।কারণ তুই খেটে খাচ্ছিস,,,কেউ কিন্তু তোকে দয়া করছেনা।।।নন্দিনী বললো।।।
,
তোর বৌমনি একদম ঠিক কথা বলেছে,,,নে এবার টাকাটা।।।
,
মিতা অভিরাজের হাত থেকে টাকাটা নেবার পর,, অভিরাজ ঘুরে নন্দিনীকে বললো,,,,,,,,,এবার তুমি বল নন্দিনী,,তোমাকে কত টাকা দেব।।আফটারঅল আজকের পার্টিতে তুমি রান্না করেছো আমার গেস্ট দের জন্য।। সেখানে তো তোমার কিছু প্রাপ্তি আছে তাইনা।।
,
নন্দিনীর মনে হলো ওর গালে যেন কেউ সপাটে একটা চড় মারলো।।। তাও ও নিজেকে সামলে বললো,,,,,, মানে ,,কি সব বলছো অভি তুমি।।আমি কেনো টাকা নেবো?
,
বাহ মিতা যদি কাজ করে ওর পরিশ্রমের টাকা নিতে পারে,,তবে তুমিও তো এতগুলো লোকের জন্য রান্না করলে।।তাহলে সেই অনুযায়ী তুমি তো রাঁধুনির কাজই করলে।।সেখানে তোমার প্রাপ্য যদি তুমি না নাও সেটা কি করে হয়।।
,
আমি তো এখানে আমার স্বামীর প্রমোশনের জন্য নিজের হাতে তাকে কিছু করে খাওয়াতে চেয়েছি।।ব্যাস আর তো কিছু করিনি।।
,
জাস্টটটটট সাটটটট ইওর মাউথ,,,,,,,,,,নন্দিনীর একটা হাত চেপে ধরে অভিরাজ বললো,,,,,,,,আমার ভালোর জন্য তুমি সবাইকে খাইয়েছো নাকি তোমার ওই মিডিলক্লাস রাঁধুনি আর হাতের কাজ জানা মায়ের জন্য করেছো।।আমি কি বুঝিনা কিছুই।।তুমি ইচ্ছে করেই আমাকে সবার সামনে অপমান করেছো।।।
এতদিন তারা জানতো আমার স্ত্রী শিক্ষিত আধুনিকা।।রান্না ঘরের দিকেই যায়না।।সে অন্য কলিগদের বৌয়ের মতো কিটি পার্টি বা শপিংয়ে বিসি থাকতেই ভালোবাসে।।
কিন্তু আজকে তুমি কি করলে? নাহ তুমি মহান হয়ে নিজেই সব কিছু রান্না করতে শুরু করে দিলে।।।
আরও একটু শক্ত করে চেপে ধরলো হাতটা নন্দিনীর।।ব্যথায় ককিয়ে উঠলো ও।।।
সেটা দেখে অভিরাজ বললো,,,,,,,খুব কষ্ট হচ্ছেনা তোমার হাতটা ধরেছি বলে,,,,,আমারও খুব জ্বলছিল মনটা তখন যখন সবাই তোমার হয়ে ভালো ভালো কথা বলছিলো আমাকে।।।আসলে তারা আমাকে বিদ্রুপ করছিলো।।কারণ আমিই সবার সামনে তোমার যে গুণগান করেছিলাম,,সেটা যে মিথ্যে তুমি নিজেই সেটা প্রমান করে দিলে।।।ওদের ঠাট্টার দৃষ্টি আমি সহ্য করতে পারছিনা নন্দিনী,,,,,তাই আমি যদি জ্বলি তোমাকেও জ্বলতে হবে।।অভিরাজ বলেই নন্দিনীকে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলো।।।
,
এতক্ষন এতকিছু চুপ করেই দাঁড়িয়ে শুনছিলো মিতা।।কিন্তু এখন যেটা অভিরাজ করতে যাচ্ছে সেটা দেখে সে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা।।ছুটে গিয়ে অভিরাজের পায়ে ধরলো।।
,
দাদাবাবু এবারের মতো ছেড়ে দাও বৌমনিকে।।আর কোনোদিন করবেনা গো।।এইবারের মতো মাফ করে দাও তাকে।।কেঁদে কেঁদে বললো মিতা।।
,
নন্দিনী যেন বিশ্বাসী করতে পারছেনা অভিরাজ তাকে কিসব বলে গেলো।।।ও তো কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই আজকে সব কিছু করেছিল,,,,তাও কেনো অভি বললো অব ওকে অপমান করার জন্য করেছে।।
,
মিতু সরে যা তুই কাজের মেয়ে কাজের মেয়ের মতোই হয়ে থাক।আমার ব্যাপারে নাক গলাতে এলে তোকেও এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেব।।তুই ভুলে যাসনা আমি কে? তোর মতোই তোর বৌমনি তাই তোদের মতো মানুষকে মাথায় চড়ায়।।কিন্তু আমি সে নই তাই ভালো কথা বলছি সরে যা।।
,
ওদের কথার মাঝে নন্দিনীর হুস ফেরে।।।দেখে ওকে অভিরাজ রান্নাঘরে গ্যাসের সামনে এনে দার করিয়েছে।।
,
নন্দিনী ভয় পেয়ে যায় ,, ,,,,,ও অভিরাজকে বলে,,,কি,,কি করছো কি তুমি আমার সাথে।।ছাড়ো অভি প্লিজ ছাড়ো আমার হাত।।লাগছে আমার।।।
,
লাগছে লাগুক।। ছাড়বোনা হাত।।দেখি আজকে কে বাঁচায় তোমায়।।।খুব রান্না করে লোককে খাওয়ানোর শখ না,,,,,প্রশংসা পাবে তাই না? দিচ্ছি শখ মিটিয়ে।।আমি যেমন জ্বলছি তোমাকেও সেই ভাবেই জ্বলাবো নাহলে আমার নামও অভিরাজ সিনহা নয়।। বলেই গ্যাসটা জ্বালিয়ে দিলো অভিরাজ।।।
,
বৌমনিইইইইইইইইইইই তীব্র ভাবে চেঁচিয়ে উঠলো মিতা।।।
______________চলবে____________________
[ কি করেছিল অভিরাজ নন্দিনীর সাথে,,,,,এরপর কি হবে নন্দিনীর?,,,,,,আচ্ছা কারোর জন্য ভালোবেসে কিছু করলে কি এটাই প্রাপ্তি হয়?,,,,জানবো সব আগামী পর্বে।।।]
Thanks for your feedback