Episode - 14|| New Bengali Story 2024
তিন বছর আগের একটি মর্মান্তিক ঘটনায় মীরার জীবন পুরোপুরি পাল্টে গেছে এবং সে এখনো সেই ঘটনার ভার বইছে,
এর পর কি ?
বন্দিনী :- পর্ব -- ১৪
তিন বছর পর,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, এই লাভ স্টোরির কি হলো
মীরুউউউ,,,,,,,,,,,,,, কোথায় গেলি উফফ আমার অফিসে লেট হয়ে যাচ্ছে যে। তোকেও তো হসপিটালে যেতে হবে নাকি। মিহিকা ড্রয়িং রুম থেকে চেঁচাচ্ছে।
,
আরে যাচ্ছিরে বাবা,,,এতো তাড়া কেন দিচ্ছিস।
,
আমি তাড়া দিচ্ছি না মা তোমার বন্ধুই বাইরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর কন্টিনিউ হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে।
,
তো নিজের হবু বরকে সামলাতে পারছিসনা। একটু ভালোবেসে বললেই আর তাড়া মারবেনা। তা না সকাল সকাল আমার পিছনে সবাই পরে আছিস।
,
এই মিহু কেন আমার বোনটার পিছনে পরে আছিস রে তোরা। আর তোদের দেরি হলে তোরা চলে যা আমি ওকে নাহয় পৌঁছে দেব। মিহির বললো।
,
আরে দাদাভাই তুই সবসময় আমারই দোষ দেখিস কেন বলতো।আমি কি ওকে তাড়া দিয়েছি নাকি ,,আকাশই তো বললো আজকে হসপিটালে নাকি কি সব জরুরি মিটিংস আছে । প্রত্যেকটা স্টাফ,ডক্টর আর বোর্ড মেম্বারদের থাকতে হবে ওই মিটিংয়ে। আর তাইতো আমি ওকে সেটাই বলছিলাম।
,
হম্ম জানি মিহু দি আমাদের আজকে একটা ভাইটাল বোর্ড মিটিং আছে।কিন্তু কি জন্য সেটা জানিনা।
,
আচ্ছা আচ্ছা ছাড় বাদ দে। এই শোননা বলছি সোহা কোথায় রে।ওকে তো দেখছিনা।আমিও অফিসে যাবো কিন্তু ব্রেকফাস্টটা কে দেবে।
,
এই কেনরে সবসময় বৌদিভাইকেই কেনো আমাদের জন্য ব্রেকফাস্ট করতে হবে আমরাও একদিন করবো। তুই চুপ করে খেতে বস আমি তর খাবার নিয়ে আসছি।মীরু তুইও বস তার আগে আকাশকে একবার ভিতরে ডাক।
,
আরে বাবা সোহা কোথায় সেটা তো বল।
,
কেনরে বৌদিভাইকে কি চোখে হারাচ্ছিস দাদাভাই।মীরু ইয়ার্কি মেরে বললো।
,
মিহির মীরার কান টেনে ধরে বললো,,,,খুব পেকেচ না খালি আমার পিছনে লাগা। আমি যদি সোহাকে চোখেও হারাই তাহলে তোর কি রে।আমার বৌ আমি চোখে হারাতেই পারি। তোকেও তো একজন চোখে হারায় তারবেলা।।
,
কথাটা শোনার সাথে সাথেই মীরার মুখটা থমথমে হয়ে যায়।ও চুপ করে ডাইনিং টেবিলে বসে পরে।
,
মিহির নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে বলে,,,,, আই এম সরি মীরু। আমি,,আমি বুঝতে পারিনি।
,
মীরা একটু হাসার চেষ্টা করে বলে ,,,আরে প্লিজ সরি বলিসনা দাদাভাই।আমি কিচ্ছু মনে করিনি। এই দ্যাখ আমাকে তো মিহুদি আকাশদা কে ডাকতে বলেছিলো।আমি যাই বুঝলি ,,দি কে বল আজকে আমি খাবোনা দেরি হয়ে গেছে।আর আমি হসপিটালেই খেয়ে নেবো কিছু।ডোন্ট ওয়ারি।ওকে বাই বাই দাদাভাই এন্ড লাভ ইউ।
,
ওকে বাই আর লাভ ইউ টু।সাবধানে যাবি আর প্লিজ মনে করে খেয়ে নিবি।
,
হম্ম টাটা।
,
মীরা বেরিয়ে যাবার পর মিহিরে কাঁধে মিহিকার হাতের স্পর্শ পেলো।
মেয়েটা নিজেকে কেমন একটা শক্ত খোলসের মধ্যে বেঁধে নিয়েছে তাইনা রে। হাসে , গল্প করে কিন্তু আমি জানি সেটা মন থেকে নয়।যা কিছু করছে সব মেকি। ও কি আর কোনোদিনও স্বভাবিক হবেনা মিহু। আমরা কি আমাদের সেই মীরাকে আর খুঁজে পাবোনা।
,
আমি জানিনা রে দাদাভাই কবে সব কিছু আগের মতো ঠিক হবে। তবে তুই কি রে আজকের দিনটা কি করে ভুলে গেলি।
,
আমি কিচ্ছু ভুলিনি। আজকে ছোট মায়ের মৃত্যু দিন আর ,,,,,,,,,,, ওহ ওই জন্যই সোহাকে দেখতে পাচ্ছিনা।
আমি জানি সোহা তার দিদি। সোহা ক্ষমা করে দিলেও আমি কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারবোনা।
,
ক্ষমা কি মীরাও কোনোদিন করতে পারবে? পারবেনা।যদি পারতো তবে প্রতিদিন নিজেকে এতটা কষ্ট ও দিতোনা।
সেই মীরা আর আজকের মীরার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। এই মীরা যেন সত্যি মীরা।মীরার মতোই তপস্যা করছে। এই বয়সে এমন বৈরাগ্য যেটা দেখে আচ্ছা আচ্ছা মানুষ অবাক হয়ে যাবে।
,
জানিস মিহু আমি খুব মিস করি আগের মীরুকে। আগের মীরুর মধ্যে যে জেদ,যে সাহস ছিলো সেটা এখনের মীরার মধ্যে নেই। সে এখন সব কিছুই দ্যাখে ,বোঝে কিন্তু কোনো বিষয়ে তার আর কিছু যায় আসেনা। থাকতে হয় থাকে,পড়তে হয় পরে আর খেতে হয় তাই খায়।
,
কি করে করবে বল,,,,,,, যার জন্য ও প্রতিবাদ করতো, যার জন্য ওর এই বেঁচে থাকার লড়াইটা ছিলো সেই মানুষটাই যে আজ ওর সাথে নেই।সারা জীবনের মতো ছেড়ে গেছে। তাহলে ওর কি দোষ।নিজের চোখের সামনে নিজের মাকে কেউ যদি শেষ হয়ে যেতে দ্যাখে তাও আবার নিজের ভালোবাসার মানুষটার হাতে,,তবে তার ওপর যে কি ঝড় আসে সেটা একমাত্র সেই মানুষটাই জানে।
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মিহিরের বুক থেকে।
,
তিন বছর আগে মেয়েটার ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে তার জন্য আমিও কিছুটা দায়ী দাদাভাই।আর তাইতো এখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি আমি।
,
মিহিকাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে মিহির বললো,,,,,,,, তুই নাহয় না জেনে ভুল বুঝে দোষ করেছিলিস।কিন্তু সে,,,,,,সেতো সব জানতো।আর সে সব জেনে ঠান্ডা মাথায় একের পর এক ঘুঁটি সাজিয়ে গেছিলো মেয়েটার বিরুদ্ধে। সে জানতো ছোটমা মীরুর একমাত্র দুর্বল স্থান।আর ওটাই সে কাজে লাগিয়েছিল।
,
জানিস দাদাভাই আমি কিন্তু সেই ছোট থেকেই আকাশকে ভালোবাসতাম।যদিও আকাশের তরফ থেকে আমার প্রতি ওর কোনো ভালোবাসা ছিলোনা।শুধুই তোর বন বলে আমার সাথে কথা বলতো।কিন্তু আকাশ মীরাকে কোনোদিনই তোর বোন বলে বোনের চোখে দেখতোনা।নাহ আজকে আমার আর কোনো আক্ষেপ নেই এই বিষয়ে।কারণ আমি জানি আকাশ আমাকে খুব ভালোবাসে।আর এটাও সম্ভব হয়েছে একমাত্র মীরার জন্য।
যে আকাশকে নিয়ে আমি ওর বিরুদ্ধে বাবা আর সাহিলের সাথে ষড়যন্ত্রে হাত মিলিয়ে ছিলাম যাতে মীরাকে চরম শাস্তি দিতে পারি। আজকে সেই মীরার জন্যই আকাশ আবার আমার জীবনে ফিরত এসেছে।মীরার এই ঋণ আমি কোনোদিনও শোধ করতে পারবোনা।
,
আমিও মীরুর ঋণ শোধ করতে পারবোনা জীবনে।আজকে আমি আমার ভালোবাসা ও আমার সন্তানকে কাছে পেয়েছি শুধুমাত্র ওর জন্যই।নাহলে আমিতো জানতেই পারিনি যে সোহা প্রেগনেন্ট ছিলো আর আমার 4 বছরের একটা সন্তান আছে।আমিতো জানতাম সোহা আমাকে ছেড়ে নিজের ছোটবেলার বন্ধুকে বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়ায় সেটেল আছে।
,
সত্যিরে দাদাভাই আমাদের বাবা নিজের মিথ্যে বংশের অহংকারের জন্য আমাদের তিন ভাই বোনের জীবনটাই নষ্ট করে দিয়েছিল। তবুও তো আমরা দিন শেষে নিজের ভালোবাসার মানুষের সান্নিধ্য টা পাই।কিন্তু মীরা,,,, ওর যে আজকে সব থেকেও কেউ রইলোনা।এমনকি নিজের পেটের সন্তানটাকেও,,,,,,,,,বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো মিহিকা।
,
চুপ কর মিহু ,,,,,,চুপ কর এই কথাটা ভুলেও মীরার সামনে উচ্চারণ করবিনা। মেয়েটা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলেছে।যদিও তোজো ছিলো বলে এটা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে।তবুও একটা মায়ের থেকে তার সন্তানকে অজান্তেই গর্ভে মেরে দিলে সেই মায়েরও যে মৃত্যু ঘটে সেটাতো জানিস।আমাদের মীরুর ও টাই হয়েছে। ক্ষমা করবোনা আমি ঐ ছেলেকে জীবনেও ক্ষমা করবোনা। আমার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিলে তিলে আমার বোনকে যে শেষ করে দিয়েছে,তাকে আমি কখনোই ক্ষমা করবোনা।
,
আচ্ছা দাদাভাই সে কি জানে আমরা এখানে আছি।
,
না জানেনা। কারণ এখানে আমাদের কেউই আসল পরিচয় জানেনা। কারণ আমরা ড্যাড এর কোনো পরিচয়ই নিজেদের সাথে নিয়ে আসিনি।আমরা অন্যদের মতোই খুব সাধারণ ভাবেই সাধারণ মানুষদের মতো আছি।
তুই যেমন একটা অফিসে ডিজাইন ডিপার্টমেন্টে আছিস তেমনি আমিও একটা কোম্পানির একসিকিউটিভ হিসেবে আছি। মীরাও হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আছে আর সোহা,,,ও তো নিজেই চায় সংসার করতে তাই ও কোনো জব করেনা।
জানিস মেয়েটার খুব শখ ছিলো ফিলোসফি নিয়ে পিএইচ ডি করার। কিন্তু তার আগেই সব টা শেষ হয়ে গেলো।
,
পাপাআআআ,,,,,,,,,,,,,, ওদের কথার মধ্যেই তোজো ছুটে এসে মিহিরের গলা জড়িয়ে ধরলো।
,
আমার তোজো সোনাটা এতো সকাল সকাল কোথায় গিয়েছিল।আর আমাকে একবারও ডাকা হয়নি কেন শুনি। শেষের কথাটা মিহির সোহার দিকে তাকিয়ে বললো।
,
লাল সাদা শাড়ি পরে হাতে পুজোর ডালা নিয়ে সোহা ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা শুনলো।
তোজো পাপা কে বলে দাও যে মাম্মা তাকে অনেকবার ডেকেছিল কিন্তু তার ঘুম ভাঙতে পারিনি।তাই মাম্মা তোজোকে নিয়েই চলে গেছে একা।
,
মিহির তোজোকে কোলে নিয়ে সোহার সামনে এসে দাঁড়ালে সোহা ঠাকুরের প্রসাদ ও ফুল ওর মাথায় ছোঁয়ায়।
,
সোহা,,,,, আই এম সরি।আসলে কালকে লাস্ট প্রজেক্টের কপি টা সাবমিট করতে গিয়েই অনেক রাত হয়ে যায়।আর তাই আমার শুতে শুতেই প্রায় তিনটে বেজে গেছিলো।তাই আমি আর উঠতে পারিনি। তাছাড়া আরও একটা বিষয়ের জন্য আমি আজকে ইচ্ছে করেই উঠিনি।
,
ছাড়ো মিহির আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি । আমি জানি এখানে তোমার কোনো দোষ নেই।আর যার জন্য আজকে পুজো দিতে গেছি সেতো নিজেই চায়না এইসব।আর আমিও তাকে এইদিনটার কথা মনে করাতে চাইনি বলেই সকালবেলায় কাউকে না বলেই বেরিয়ে গেছি তোজোর কে নিয়ে।
,
তুমি কি দুজনের নামেই পুজো দিয়েছো বৌদিভাই।
,
হ্যাঁ মিহু আর সাথে ছোট মায়ের জন্য কিছু কাঙালি ভোজন ও কিছু দানও দিলাম তোজোর হাত দিয়ে।
,
এটা ভালো করেছো সোহা। মীরু তো আর করবেনা এইসব তুমি মীরুর জন্য এটা করে খুব ভালো করেছো।
,
আমি জানি আমার পরিবার মীরার সাথে যে ব্যবহার করেছে তারপরে আমার তোমাদের কাছে মুখ দ্যাখানোরও যোগ্যতা নেই।কিন্তু ছোটমা নেই বলে তো আমি তার দেওয়া কর্তব্য গুলোকে ফেলে দিতে পারিনা।
আমি আমার সাধ্যমতো মেয়েটার জন্য করে যাবো।
,
সোহাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে মিহির বললো,,,,,, তুমিও তো মীরুর আরেক মা সোহা।যে ক্ষত মেয়েটা জীবনে পেয়েছে সেটা না হয় আমরা সবাই মিলে আস্তে আস্তে ভরিয়ে দেব।
,
হ্যাঁ রে মিহু তুই মীরাকে ব্রেকফাস্ট আর টিফিন দিয়েছিস।
,
না বৌদিভাই মীরু কিছু না খেয়েই আজকে চলে গেছে।ও হয়তো বুঝতে পেরে গেছে তুমি কোথায় গেছো।
,
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সোহা বললো,,,,,,আমি জানতাম মীরা আজকে কিচ্ছু খাবেনা। ঠিক আছে আমিই নাহয় বেলার দিকে গিয়ে ওকে লাঞ্চটা করিয়ে নিয়ে আসবো।
,
উমম তার চেয়ে একটা কাজ করলে হয়না আজকে আমরা সবাই মিলে লাঞ্চটা বাইরে করলে হয়না। এই মিহু তোর সময় হবে?
,
হ্যাঁ দাদাভাই হবে।
,
তাহলে সোহা তুমি একটা ক্যাব নিয়ে মীরার হসপিটালে চলে যাও আমি আকাশকে বলে দেব ওখান থেকে তুমি , মীরা , তোজো আর আকাশ বেরিয়ে পরো।আর আমি বরং মিহুকে নিয়ে তোমাদের সাথে জয়েন করে নেবো।
,
সে নাহয় ঠিক আছে,কিন্তু মীরু রাজি হবেতো দাদাভাই।
,
সেটার দায়িত্ব বরং আমাকেই দিয়ে দে। চল দেরি হয়ে যাচ্ছে তোকে অফিসে নামিয়ে আমিও যাবো। সোহা আমার খাওয়া হয়ে গেছে।তুমি আর তোজো কিছু খেয়ে নাও প্লিজ।এই চল মিহু।বাই তোজো সোনা উম্মাহ।টাটা।
,
টাটা পাপা।
,
,
হ্যাপি বার্থডে মীরা,,,,,,,,,,, আকাশ মীরাকে গাড়িতে বসতেই বললো।
,
কথাটা শোনার পর মীরা কোনো জবাব দেয়নি ওকে। বরং ওর কথাকে ইগনোর করে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো,,,,,,,,,এই আকাশদা,,,, আজকে কিসের জন্য এতো জরুরি মিটিং গো।জানো তোমার এতো তাড়ার জন্য আমি আজকে ব্রেকফাস্ট করতেই পারলামনা।
,
সে কি তুমি এখনো কিছু খাওনি। আর যতদূর জানি সোহা বৌমনি তো তোমাকে না খাইয়ে ছাড়বেনা।
,
আরে বৌদিভাই থাকলে তো খাওয়াবে। আজকে সকালে কোথায় গেছে কে জানে। কিন্তু তুমি কি জানো আজকে তোমার হবু বৌ নিজের হাতে ব্রেকফাস্ট বানিয়েছে।
,
কিহ মিহু রান্না করেছে। বাবারে আজকে কোন দিকে সূর্য উঠেছে।
,
এই এই একদম আমার মিহুদির নামে কিচ্ছু বলবেনা। তুমি জানো ও কত সুন্দর নাচ করতে পারে। আর ওর হাতের ডিজাইন কত ভালো। ওর জন্য ওর কোম্পানি কত লাভ করছে বলতো।
,
থাকমা আমার জেনে কাজ নেই,,,,,, তবে একদিকে আজকে তুমি ব্রেকফাস্ট না করে ভালোই করেছো।
,
কেন বললে,,,,
,
আরে নাহলে আমাকে এক্ষুনি তোমাকে হসপিটালে ভর্তি করতে হত।ওরে বাপরে জানিনা রান্নায় কিসব মসলা দিত যেটা খেয়েই তুমি,,,
,
স্টপিড আকাশদা। আরে মিহুদি আর রান্নায় কোনো এক্সপেরিমেন্ট করেনা।বরং বৌদিভাইয়ের থেকে দেখে এখন অনেক কিছুই শিখে নিয়েছে। দাড়াও তোমার সাথে বিয়ে হোক তখনই তুমি বুঝতে পারবে।
,
রক্ষে করো ঠাকুর আমি বরং এক্সট্রা কুক রেখে দেব তাও ভালো কিন্তু এই রিস্কটা আমি নিতে পারবোনা।
,
তারপর দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো।
,
এই মীরা গাড়ির এই ডিকীটা খোলোতো।
,
কেনো কি আছে এতে।
,
আরে বাবা খোলোই না।
,
মীরা ডিকি টা খুলে দ্যাখে একটা টিফিনবক্স।
আরে টিফিনবক্স আছে তো।
,
হম্ম বলেই আকাশ গাড়িটা রাস্তার একসাইডে দার করায়। তারপর মীরার থেকে টিফিনবক্সটা নিয়ে সেটা খুলে এক চামচ পায়েস মীরার মুখের সামনে তুলে ধরে।
শুভ জন্মদিন মীরা,,,,,,, আমি জানি আজকের দিনটা তুমি কোনোভাবেই মনে রাখতে চাওনা। তবুও একজন বন্ধু হিসেবে আমিতো আমার বন্ধুর জন্মদিনটা মনে রাখতেই পারি। জানি আজকের দিনেই তুমি তোমার সবকিছু হারিয়ে ছিলে।কিন্তু মীরা আজকে যদি আন্টি থাকতো তাহলেও কি তুমি এইভাবে ওনাকে ফিরিয়ে দিতে। আমি অনেকটা আশা নিয়ে আমার বন্ধুর জন্য নিজের হাতে পায়েস করেছি। তুমি কি আমাকে ফিরিয়ে দেবে মীরা!
অনেকটা আশা নিয়ে আকাশ পায়েসের চামচটা মীরার মুখের সামনে তুলে ধরে।
,
ছল ছল চোখে মীরা আস্তে আস্তে আকাশের হাত থেকে পায়েসটা খেয়ে নেয়।
,
আকাশের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মীরার পায়েস খেয়েছে দেখে।
,
থ্যাংক ইউ মীরা,,,,, আমার অনুরোধটা রাখার জন্য।
,
চোখের জলটা মুছে মীরা বললো,,,,,,,,, থ্যাংক ইউ টা তোমার নয় আমার বলা উচিত আকাশদা।আমার জীবনটা তো এমনিতেই শেষ হয়ে গেছিলো। আমিতো ভাবতেও পারিনা আমি এখনো বেঁচে আছি বলে। আজকে যদি তুমি,মিহুদি,দাদাভাই,বৌদিভাই আর তোজো সোনা না থাকতো,,তবে এই মীরার জীবন কবেই শেষ হয়ে যেত।
,
মীরার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আকাশ বললো,,,,,, যেটা হয়ে গেছে সেটাকে তো আমরা বদলাতে পারবোনা।কিন্তু আজকে একটা কথা দিতে পারি তোমাকে,,,তোমার পাশে আমি আগেও ছিলাম,আছি আর সারাজীবন পাশে থাকবো।
,
ম্লান হেসে মীরা বললো,,,, আমি জানি আকাশদা তোমরা সব সময়ই আমার পাশে থাকবে। তোমরা আছো বলেই এখনো আমি আমার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলিনি।
,
ঠিক আছে আর এইসব কথা ভাবতে হবেনা । চলো চলো তাড়াতাড়ি যেতে হবে হসপিটালে।কথাটা বলার পরই আকাশ গাড়ি স্টার্ট করে।
,
জানলার দিকে তাকিয়ে তখন মীরার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তিন বছর আগে ওরই জন্মদিনের কিছু দৃশ্য। বাড়ি ভর্তি লোক, সামনে কেক কাটার দৃশ্য, তারপরই একটা প্রজেক্টটারে ওর আর আকাশদার সাথে ঘনিষ্ট কিছু দৃশ্য দ্যাখানো হচ্ছে যেটা ওরা দুজনেই কেউ ইচ্ছে করে করেনি। তারপরেই ওর মাকে অপমান করা সবার সামনে, ওর মায়ের অপমানিত হওয়া ও তারপরেই বুকের যন্ত্রনায় ওর মায়ের সেই ঘৃণার দৃষ্টি যেটা আজও ওকে ঘুমোতে দেয়নি। মায়ের হঠাৎ মৃত্যু ও তার সাথেই ওই সময় ওর শরীর থেকে নিজের অস্তিত্বকে পায়ের গা বেয়ে বেরিয়ে আসতে দ্যাখা। তারপর আর কিছু মনে নেই।জ্ঞান ফেরার সময় যখন চোখ খুললো তখন ওর সারা পৃথিবী পাল্টে গেছে।
চোখটা চেপে বন্ধ করে নেয় মীরা। তারপর চোখের জলটা মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
নাহ,,,,, আর ভেঙে পরবোনা। যেটা হয়ে গেছে তার জন্য একমাত্র দায়ী আমি নিজে। আমি যদি অন্ধভাবে কাউকে বিশ্বাস না করতাম তাহলে হয়তো আজকে মা আমার সাথে থাকতো।
আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করবোনা। যতটা যন্ত্রনা আমার মা আমার জন্য করেছে তার থেকেও বেশি কষ্ট আমি নিজেকে দেব।
হঠাৎ করেই একজনের মুখ ভেসে উঠলো মীরার মনে। না,,,,,না না,,,,, আমার জীবনে ওর আর কোনো অস্তিত্বই নেই। মীরা সিংঘানিয়া মরে গেছে।আমি মীরা রায়। মিনাল রায়ের মেয়ে। আমি না কারোর মেয়ে , না কারোর পুত্রবধূ আর না কারোর স্ত্রী।
মীরার চোখে আর কোনো জল নেই।আছে একটা কঠিন দৃষ্টি সাথে শুন্যতা।
FAQ
এই বাংলা গল্পে মীরা জীবন পথে কি কোনো নতুন মোড় আসতে চলেছে? তার মানসিকতা ও অভিজ্ঞতায় কীভাবে পরিবর্তন ঘটতে চলেছে?
বন্দিনীর সকল পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন - বন্দিনী ভালোবাসার বাংলা গল্প
Thanks for your feedback